১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৬:৩৭

বগুড়ায় পিয়াজের ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া:

বগুড়ায় পিয়াজের ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া। এই জেলার মাটি খুব উর্ব্বর। সে কারণে সব ধণের আবাদ আবহাওয়ায় মানিয়ে নেয়। সবজি চাষের পাশাপাশি বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় পিয়াজ চাষে ব্যস্ত কৃষকরা। বর্তমান বাজারে পিয়াজের দাম দফায় দফায় বাড়ার কারণে কৃষকরা ঝুঁকছেন এই আবাদে। বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে পিয়াজের আবাদ। 

জানা যায়, বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় পিয়াজ চাষ করে থাকেন কৃষকরা। বর্তমান বাজারে পিয়াজের দাম বাড়ার কারণে অন্য আবাদের পাশাপাাশি পেঁয়াজ চাষে বেশি ঝুঁকছেন কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কৃষকরা অধিক পরিমানে জমিতে পিয়াজ চাষ শুরু করেছেন। বর্তমান কৃষিকে স্মার্ট কৃষিতে পরিণত করতে কৃষকরা আধুনিক চাষাবাদ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। প্রায় জমিতে বছরে ৪টিসহ সাথী ফসল হয়ে থাকে। এবার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পিয়াজের চাষ চোখে পড়ার মতো।
বগুড়া কৃষি সসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, বগুড়া জেলায় পিয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এ বছর জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছরে জেলায় পিয়াজের যে বাম্পার ফলন হয়েছে তা দিয়েই স্থানীয় চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে। 
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় এবার পেঁয়াজের চাষ ভালো হয়েছে। উপজেলার বিহার, আলীগ্রাম, উথলী, ডাবইর, মোকামতলা এলাকায় বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। কৃষকদের পেঁয়াজের ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। কৃষকরা আগাছা, বালাইনাশক স্প্রেসহ পেঁয়াজ জমি থেকে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শিবগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় গত বছরের তুলনায় এবার পিয়াজের চাষ অনেক বেশি হয়েছে। এবছর উপজেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১৫ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩৭০ হেক্টর জমিতে দেশী জাতের পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৫ মেট্রিকটন। গত বছর আবাদ হয়েছিল ২৫০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিলো ৩ হাজার মেট্রিকটন।
কৃষকদের দাবি, উপজেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৪’শ হেক্টর জমিতে পিয়াজের চাষ হয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদা অনেকটাই মেটাবে। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ৭৫-৮০ মণ পিয়াজ উৎপাদন হবে।

উপজেলার আলী গ্রামের পেঁয়াজ চাষী শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন। গত বারের তুলনায় বীজ ও সার-কীটনাশকের দাম কিছুটা বেশি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বিগুণ স্প্রে করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলে প্রতি বিঘায় গড়ে ৮০ মণ পিয়াজ উৎপাদন হবে। সাড়ে ৪ লক্ষ টাকার মতো পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন এই কৃষক।

শিবগঞ্জ কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি প্রতিমণ ৩ হাজার ৪’শ টাকায় কিনে প্রতি কেজি ১’শ ১০টাকায় বিক্রি করছেন। পিয়াজের হঠাৎ দাম বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকেরা আগেভাগেই জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার কারণে ২দিনের ব্যবধানে দাম অনেকটা কমে এসেছে। দুদিন আগেই বাজারে  প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৬০-১৮০টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল-মুজাহিদ সরকার জানান, এবছর শিবগঞ্জ উপজেলা জুড়ে পেঁয়াজের ব্যাপক চাষ হয়েছে। বাজার দর ঠিক থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহী বেড়েছে। কৃষি অফিস থেকে উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি উপকরণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এবার ১১৫ বিঘা জমিতে কৃষকদের পিয়াজের প্রণোদনা হিসেবে প্রতি বিঘার জন্য ১ কেজি করে পিয়াজের বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেয়া হয়েছে। আশা করছি শিবগঞ্জের উৎপাদিত পিয়াজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যন্য দেশের জেলায় বিক্রি করা হবে। 

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর