২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১০:৪২

কুড়িগ্রামে সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা কৃষকদের

খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা কৃষকদের

কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা চলতি বছর নদ-নদীর বিভিন্ন চরেও সরিষার আবাদ করেছেন। ফলে এখন দিগন্ত জুড়ে হলুদে ছেয়ে গেছে। কোথাও কোথাও সরিষা ফুল শেষে ফলনের প্রত্যাশায় কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি বছর জেলার সদর উপজেলাসহ ৯ উপজেলায় কৃষকরা তাদের জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন।

জেলা সদরের মোগলবাসা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে অনেক কৃষক সরিষার আবাদ করেছেন। এমনকি তারা এ এলাকায় নদীর চরেও চাষ করেছেন সরিষা।

মোগলবাসা এলাকার চরের কৃষক নবিজ উদ্দিন জানান, আমি গত বছরের চেয়ে এবার ৫০ শতক জমিতে বেশি করে সরিষা আবাদ করেছি। কেননা এ চাষে খরচ খুব হয় না। লাভের পরিমাণ বেশি থাকে। গত বছর আমি লাভ করায় এবার একটু বেশি করে সরিষা আবাদ করেছি।

অন্যদিকে, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ জুড়ে আবাদ করা হয়েছে সরিষা। দিগন্তজুড়ে যেন হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ একটি উপজেলাতেই সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ করা হয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়।

কম খরচে অধিক লাভ, তাই সরিষা চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ অনেক। উপজেলার দুধকুমার ও কালজানী নদের জেগে ওঠা চরেও কৃষকরা লাগিয়েছেন সরিষা। ফসলের মাঠ যেন সেজেছে হলুদের সাজে। মৌমাছির মধু সংগ্রহেরও গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। সরিষা চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। এতে যেমন সময় লাগে কম, খরচও কম, লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনের আগ্রহী বেশি এ অঞ্চলের কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে বলে জানায় জেলা কৃষিবিভাগ। এতে করে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশের সরিষা তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের কৃষক মোজাহার, ইয়াকুব ও মফিজউদ্দিন বলেন, আমরা দুই বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে দুই হাজার টাকা করে খরচ করা হয়েছে। সরিষার ক্ষেতে গেলে প্রাণটা ভরে যায়।

একই উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের ছিট পাইকের ছড়া গ্রামের কৃষক জয়নাল, দুলাল, মোস্তাফিজুর, ইসমাইল ও নজরুল বলেন, আমরা আড়াই বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর সরিষার আবাদ অত্যন্ত ভাল হবে বলে আশা করি। এই সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের তেল ও সার কেনার টাকা আমরা জোগাড় করে ফেলব। পরে বোরো চাষে কোনো সমস্যা হবে না।

কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ২৬ হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। তবে সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ছাড়িয়ে গেছে।

কৃষক ও কৃষি বিভাগ জানায়, জেলার নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পলি মিশ্রিত জমি সরিষা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সেচ, সার ও অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষে লাভ হয় বেশি। তা ছাড়া সরিষার তেল, সয়াবিন তেলের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় এর ব্যাপকতা দিন দিন আরও বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে কৃষকরা দুটি ফসল উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু সেই জমিতে সরিষা চাষ করলে তাতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হন, অপরদিকে পুষ্টিকর ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটে থাকে। তাই কৃষকদের সরিষা চাষ করতে আগ্রহী করে তুলতে কৃষকদের বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার দেওয়া হয় কৃষি বিভাগ থেকে।

কৃষকরা বলছেন, আমন কাটা মাড়াইয়ের পর ৩-৪ মাস পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা ঘরে তুলে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদও করা যায়। এতে অল্প সময়ে একই জমিতে দুটি ফসলের চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার জানান, এবছর জেলার সকল উপজেলায় সরিষার আবাদ বাম্পার হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ফলন হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর