৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৬:১১

আখের গুড়ে বাজিমাত, কৃষকের মুখে মিষ্টি হাসি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

আখের গুড়ে বাজিমাত, কৃষকের মুখে মিষ্টি হাসি

চন্ডিমুড়া। কুমিল্লার লালমাই, সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলার সংযোগস্থল। চন্ডিমুড়া মন্দির ঘেঁষে দুইশ’ গজ সামনে সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুর। এখানে ছোট বড় কয়েকটি লাল রঙের পাহাড় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। দুইটি পাহাড়ের মাঝের সমতলে চাষ হয়েছে আখ। সেই আখ পাশের জমিতে মেশিন লাগিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। মিষ্টি রসে ভরছে টিনের পাত্র। রস পাশের চুলায় ফুটানো হচ্ছে। এক সময় আগুনের তাপে ঘন হয়ে আসে আখের রস। মিষ্টি গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এখন প্রতিদিন এই দৃশ্য দেখা যায় বড় ধর্মপুরে। উদ্যোক্তা স্থানীয় আলী নেওয়াজ।

সরেজমিন দেখা যায়,পাহাড়ের কোলে ভোর থেকে কর্মব্যস্ততা। কেউ আখ কাটছেন। কেউ মেশিনে আখ ঢুকিয়ে রস বের করছেন। কেউ চুলা জ্বালিয়ে রস ফুটাচ্ছেন। ঠাণ্ডা করা তরল গুড় কেউ বোতলে ভরে মেপে দিচ্ছেন। জিভে পানি আনা গুড় কিনতে দুপুর ১২টার পর সেখানে ক্রেতাদের লাইন পড়ে। কেজি ২৫০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে সোনালি আখের গুড়। শ্রমিকদের সাথে ব্যস্ত দেখা যায়, উদ্যোক্তা আলী নেওয়াজ ও সহ উদ্যোক্তা শামছুল হককেও। মিষ্টি গুড় বিক্রির নগদ টাকা পেয়ে উদ্যোক্তার মুখে লেগে থাকে মিষ্টি হাসি।

ক্রেতা পাশের লালমাই উপজেলার দুতিয়ারপাড় গ্রামের আনোয়ার হোসেন, বরুড়া উপজেলার বড়বাতুয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, বাজারের আখের গুড় থাকে নানা রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। এখানে চোখের সামনে গুড় তৈরি হচ্ছে। ভেজালমুক্ত গুড় পরিবারের সদস্যরা খুব পছন্দ করেছে। 

গুড় তৈরির কারিগর রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার আট খুনিয়া গ্রামের কবিরুল ইসলাম বলেন, ১৫ বছর ধরে আখ মাড়াই করি। আমরা এই টিমে চারজন আছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই কাজ করি। মেশিন চালানো ছাড়া ফসলের জমি পরিচর্যা, আখের রস পাক (ফুটানো) দেয়াসহ সব কাজ করি। 

উদ্যোক্তা আলী নেওয়াজ বলেন, ২০/২২ বছর আগে এই এলাকায় গুড় বানানোর আখের চাষ হতো। তখন গরু দিয়ে মাড়াই করা হতো। গত বছর কুমিল্লা সদরের সীমান্ত এলাকা থেকে আখের চারা এনে লাগিয়েছি। ফলন ভালো হয়েছে। নাটোর থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে আখ মাড়াইয়ের মেশিন এনেছি। মানুষকে ভেজালমুক্ত গুড় দিতে পেরে ভালো লাগছে। 

তিনি আরো বলেন, ৮বিঘা জমিতে আখ চাষে দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কয়েকদিনে এক লাখ টাকার গুড় বিক্রি করেছি। আশা করছি মোট পাঁচ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো। বিক্রি চলবে পুরো এক মাস।

স্থানীয় উপ-সহকারী কর্মকর্তা এম এম শাহারিয়ার ভূঁইয়া ও সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি অফিসার জোনায়েদ কবির খান বলেন, আলী নেওয়াজ উদ্যমী কৃষক। তাকে আখ চাষে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। তার ফলন ভালো হয়েছে। তাকে দেখে পাহাড়ের পতিত জমিতে অন্য কৃষকরাও এ ফসল চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করি। 


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর