২৮ জুন, ২০২৪ ১৬:২৭

পাহাড়ে মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড়ে মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন

পাহাড়ে মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন

পাহাড়ে মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। টসটসে রসালো। দেখতে আকর্ষণীয়। খেতেও মজাদার। এমন সব মিশ্র ফলের উৎপাদন হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ে। হাতের নাগালে মিলছে , দেশি-বিদেশি আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, লটকনস, ড্রাগন, রাম ভুটান, জাম, গাবসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমী ফল।

এসব ফল শুধু রাঙামাটির হাট-বাজারে নয়, মিলছে অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। মিশ্র ফলের রসালো গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে পাহাড়ি জনপদে। এখন কাঁচা-পাকা ফলে ভরপুর পাহাড়ের হাট বাজার। আম, কাঁঠাল, লিচু আর আনারসের সয়লাব পাহাড়জুড়ে। প্রতিদিন বসছে এসব মৌসুমী ফলের হাট। এতে ক্রোদের আকর্ষণ যেমন বেশি, তেমনি লাভবান হচ্ছেন বিক্রেতারা। দামও সাধ্যের মধ্যে। পার্বত্যাঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে এসব বাহারী ফল বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। রপ্তানির সাথে আয়ও বাড়ছে কৃষকদের। শুধু হাট-বাজারে নয়, অনলাইনেও ব্যবসা জমে উঠেছে এসব মৌসুমী ফলের।

রাঙামাটি জেলা কৃষি তথ্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে পার্বত্যাঞ্চল অর্থাৎ তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুর প্রচুর ফলন এসেছে। তার মধ্যে রাঙামাটি জেলা সদর, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।

কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, রাঙামাটি জেলায় মিশ্র ফলের আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। তার মধ্যে আমের বাগান রয়েছে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর। এসব বাগানে এবার প্রায় ৯.৮ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হয়েছে। তার মধ্যে রেগুয়াই ও আম্রপালির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ে ফলন ভালো হওয়ায় দেশি জাতের পরিবর্তে এখন অধিক চাষাবাদ হচ্ছে চায়না-২, চায়না-৩ জাতের লিচুর। বোম্বে লিচুর ফলনও হচ্ছে উচ্চমাত্রায়। শুধু রাঙামাটি জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে ৯ হাজার ৯০০ হেক্টর। চলতি বছর লিচুর উৎপাদন হয়েছে ৯.৫০ মেট্রিক টন। একই সাথে আনারস-১১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে। আর কাঁঠাল আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন।

এ বিষয়ে কথা হয় রাঙামাটির স্থানীয় মৌসুমী ফল চাষি ও ব্যবসায়ী সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা সাথে। তিনি বলেন, রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোনা রাম কাউরি পাড়া এলাকায় প্রায় ১৫ একর হেক্টর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান করেছেন তিনি। ফলও হয়েছে বাম্পার। তবে কৃষকদের চাহিদামতো মিলছে দাম। অধিক লাভের আশায় কম দামে ফল কিনতে চায় ব্যাপারীরা।

রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাঙামাটির বিভিন্ন মৌসুমী ফলের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। ফলনও হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক। বিশেষ করে উন্নত চাষাবাদের কারণে পাহাড়ে সব মৌসুমে যে কোনো মৌসুমী ফল পাওয়া যায় এ পার্বত্যাঞ্চলে। এজন্য পাহাড়কে এখন মৌসুমী ফলের দেশ বলা হচ্ছে। কৃষকরা যদি আরও একটু সচেতন হয়, তাহলে এসব ফল উৎপাদন ধরে রাখা সম্ভব হবে।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খাঁন বলেন, এ সম্ভাবনাময় কৃষি খাতকে উন্নয়নশীল করতে পার্বত্যাঞ্চলে মৌসুমী ফল সংরক্ষণ ও কৃষকদের স্বার্থে হিমাগার স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

সর্বশেষ খবর