৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:৪১

কচু চাষে সফল লক্ষ্মীপুরের সিরাজুল

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

কচু চাষে সফল লক্ষ্মীপুরের সিরাজুল

‘থাই গোল্ড’ জাতের পানি কচু চাষে সফল হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম নামের লক্ষ্মীপুরের এক কৃষক। সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামে নতুন এ জাতের কচু চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন এ কৃষি উদ্যোক্তা। তার দেখাদেখি এখন কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরা। 

চারা বিতরণ ও চাষাবাদের নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন সিরাজুল। একই সঙ্গে দেশের সবজির চাহিদা মেটাতে সারাদেশে তা ছড়িয়ে দেয়া ও বিদেশে রপ্তানীর আগ্রহ প্রকাশ করেন এ কৃষক।  তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে জানান।  

জানা যায়, স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে শখের বসে নার্সারি দিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা উৎপাদন শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি এলাকার আগ্রহী যুবকদের হাতে-কলমে চারা উৎপাদন করা শিখাতে থাকেন। তার কাছে চারা উৎপাদন শিখে ইতোমধ্যে ৫০ জন বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। সম্প্রতি ইউটিউব দেখে ও বিদেশী বন্ধুদের থেকে শুনে ‘থাই গোল্ড’ জাতের পানি কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। 

জানতে চাইলে কৃষক সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চলতি বছর বছর তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে ২৮০টি ‘থাই গোল্ড’ জাতের কচুর চারা এনে বাড়ির পাশের পাঁচ শতাংশ জমিতে রোপণ করেন। পরে সেখান থেকে চারা সংগ্রহ করে বর্তমানে ২১ শতক জমিতে ১৮০০ কচুর চারা লাগিয়েছেন। ৪ মাস পর বর্তমানে এসব কচু বিক্রি উপযোগী হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বিক্রিও শুরু করেছেন বলে জানান। 
তিনি বলেন, প্রতিটি কচু লালচে রংয়ের বিশাল আকৃতির (১২ ফুট) হয়ে ওজনে ২০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এসব কচু ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় আশে পাশের লোকজন এসে মাঠ থেইে কচু কিনে নেন। আর কিছু বিভিন্ন হাটে উঠিয়ে বিক্রি করেন। একই সঙ্গে কচুর লতি ও ফুল বিক্রি করা হয়। একেকটি কচু গাছ থেকে ১০-১২ টি লতি ও ফুল পাওয়া যায়। 
লতির আকৃতি মোটা তবে কচু ও লতি অনেক সুস্বাদু বলে জানান স্থানীয়রা। এ ছাড়া প্রতিটি লতি লম্বায় চার ফুট ও ১২ মিলিমিটার পর্যন্ত মোটা হয় ১০-১১টিতে কেজি ওজনের হয়, যার বাজার মুল্য ৪৫-৫০ টাকা। আবার এ লতি থেকে ৩ ইঞ্জি পর শাখা বের হয়।  যা থেকে ৪-৬টি নতুন চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। চাষাবাদের সময় মাঝে মাঝে ছত্রাকনাশক ঔষধ ব্যবহারসহ উৎপাদন ব্যায়, পরিবহন এবং বিপণনে প্রতিটি কচুতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হয়। বাজারে তার উৎপাদিত কচু ও লতি নিয়ে গেলে মানুষ একনজর তা দেখার জন্য ভিড় জমান। বর্তমানে তিনি খেতে উৎপাদিত কচু বিক্রি শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে শতাধিক কচু বিক্রি করেছেন বলে জানান।
চলতি বছর তার চাষাবাদকৃত কচু বিক্রি করে অন্তত ৩ লাখ টাকা আয়ের আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
সিরাজুল বলেন, ইতোমধ্যে ১০ জন চাষিকে এ কচু চাষ করার জন্য চারা দিয়েছেন তিনি। তার কচু খেতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ঢুকে হাত উঁচু করলেও বাইরে থেকে দেখা সম্ভব না। তার জানা মতে তিনিই প্রথম দেশে ‘থাই গোল্ড’ জাতের কচুর চাষ শুরু করেছেন। তবে কোন কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ নেই জানিয়ে দেশের চাষিদের মধ্যে এ কচু চাষ বিস্তারে তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। বর্তমানে এ কৃষক তার উৎপাদিত কচু, লতি ও ফুল আরো ব্যাপকভাবে চাষ করে বিদেশে রপ্তানীর চিন্তা করছেন বলে জানান।
এদিকে সিরাজুল ইসলামের নতুন উদ্ভাবিত কচু চাষের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎসুক চাষিরা তার কচু খেত দেখতে আসছেন বলে জানা যায়।  

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফিরোজ বলেন, লক্ষ্মীপুরে এ প্রথম ‘থাই গোল্ড’ কচু উৎপাদনের খবর শুনেছি। কোন ধরণের সহযোগিতা চাইলে আমরা চেষ্টা করবো।

বিডি প্রতিদিন/এএম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর