১৫ আগস্ট, ২০২৪ ২১:৪৪

বগুড়ায় ভালো দাম পাওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় ভালো দাম পাওয়ায় পাট
চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের

বগুড়ায় দাম পেয়ে সুদিনে ফিরতে চাইছে পাট চাষিরা। বগুড়ার বাজারে পাটের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষিরা বেশ উৎসাহ নিয়ে পাট জাগ দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ পাট হাটে তুলে বিক্রিও করেছেন। তবে অতিবৃষ্টি ও খরায় এবার পাটের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শংকায় রয়েছে চাষিরা। ফলন কম হওয়ার আশংকায় হাটে হাটে দামও বেড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুশি হয়েছেন পাট চাষিরা।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী উপজেলার গ্রামীণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ডোবার জলে, নদীর অল্প পানিতে, পুুকুরের পানিতে কিম্বা বৃষ্টির পর নিচু জমিতে জমে যাওয়া পানিতেও পাট ভেজানোর পর আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদী ঘেরা পারতিত পরলের গ্রামের পাট চাষিদের আঁশ ছড়ানোর কাজ শেষ। পথে পথে পাট চাষিরা পাটের আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। গৃহবধূরা ছড়ানো পাটের আঁশ নিয়ে সড়কের পাশে বাঁশ টানিয়ে তার উপর শুকিয়ে নিচ্ছেন। পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর পাটকাঠিও শুকিয়ে বাজারে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা। কোথাও কোথাও আবার নতুন পাট বাজারে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। পাট শুকানোর গন্ধ নাকে এসে পড়ছে। এসবই কেবল এখন গ্রামীণ পথের দৃশ্য চোখে ভেসে বেড়ায়। কোন কোন উপজেলার চাষিরা রোদে শুকিয়ে নিয়ে হাটে বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন।

জানা যায়, সোনালী আঁশের সবুজ গাছে স্বপ্ন বুনে কৃষক। কম খরচে লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরই জেলায় পাট চাষ হয়ে থাকে। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। জুন ও জুলাই মাসে বগুড়া জেলায় পাট চাষ হয়ে থাকে। ঠিক এ সময়ই জেলার সারিয়াকান্দিতে বন্যায় বেশিরভাগ পাট পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে পানিতে নিমজ্জিত থাকার কারণে এ বছর চরাঞ্চলের নিম্ন এলাকার পাট পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পরপরই আবার রোদে খরা দেখা দেয়। পাট চাষিরা পড়েন বিপাকে। একদিকে বন্যার জন্য পাট কাটা অপরদিকে বন্যার পরপরই খরা। এর পরপরই আবার বৃষ্টির দেখা মেলে। আশায় বুক বাঁধেন পাট চাষিরা। কেউ কেউ অপরিপক্ক পাট তড়িঘড়ি করে কেটে নিয়েছেন বন্যার কারণে। এতে তারা পাটের আশানুরূপ ফলন পাননি। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাট চাষিরা পাট কেটে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার বেশিরভাগ পাট চাষি হাটে পাট তুলে বিক্রি শুরু করেছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে এ বছর নতুন পাটের আমদানি কম দেখা যাচ্ছে। বিগত দিনে হাটে হাটে প্রচুর পাটের আমদানি হতো। এ বছর সে রকম পাট দেখা যায়নি। নতুন পাটের আমদানি ভালো না থাকায় পাট ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনে নিচ্ছেন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউপির কুড়িপাড়া চরের পাটচাষি আব্দুল বাছেদ মিয়া জানান, তিনি এ বছর ৭ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছিলেন। এর মধ্যে ২ বিঘা জমির পাট বন্যায় নষ্ট হয়েছে। আর ৫ বিঘা জমিতে পাটের খুবই ভাল ফলন হয়েছে। তিনি বিঘা প্রতি জমি হতে এ বছর গড়ে ৮ মণ পাট পেয়েছেন। পাট আঁশ ছাড়িয়ে শুকিয়ে এখন হাটে তোলার অপেক্ষায় আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হাটে পাট তোলা যায়নি। সে সময় দাম খুবই কম ছিলো। এখন আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে। পাট এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩৪০০ টাকা মণ। 

সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউপির ইন্দুরমারা চরের পাট চাষি শাজাহান আলী জানান, চলতি বছরের বন্যায় পাট খুব একটা নষ্ট হয়নি। এবারে বন্যা কিছুটা কম হয়েছে। পাটও নষ্ট কম হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকায় হাটের দিনে কৃষকরা খুবই ভোরে অটোভ্যান, ভটভটি প্রভৃতি যানগুলো দিয়ে পাট বিক্রয় করতে সারিয়াকান্দি হাটে আসেন। সকাল ৯টার মধ্যে পাটের বেচাকেনা শেষ হয়। সকাল ৯টায় হাটে প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মণ পাটের আমদানি হয়। পাট সর্বনিম্ন ২৮০০ থেকে ৩৩০০ টাকা মন বিক্রি হয়েছে। ভালোমানের শুকনা পাট বিক্রি হয়েছে ৩৪০০ টাকা মণ।

বগুড়া জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২২ সালে বগুড়ায় পাট চাষে জমির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৬৩৪ হেক্টর। বিপরীতে অর্জন হয় ১০ হাজার ৬৯০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন। পাটের দাম কম থাকায় চাষের জমিও কমে যায়। ২০২১ সালে ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমির বিপরীতে অর্জন হয়েছিল ১১ হাজার ১৬৭ হেক্টর। আর উৎপাদন পাওয়া যায় ৩০ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৪ এ বগুড়ায় এবার ৮ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৭ হাজার  ৮৩৪ হেক্টর। ভালো দাম পেয়ে পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে বগুড়ার কৃষকদের। এর মধ্যে মিলছে সরকারি প্রনোদনা। এতে করে উৎপাদন খরচও বেশ কমেছে চাষিদের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় পাটক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারেনি কৃষক। প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচে ৮ থেকে ১০ মন পাট পাওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামীতে উৎপাদন আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা কৃষি কর্মকর্তাদের। 

বগুড়া পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, বগুড়ায় এবার ৮ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৪ বেল। সরকারিভাবে প্রনোদনা দেয়ার কারণে কৃষক আগ্রহী হচ্ছে পাট চাষে।  প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচে ৯ থেকে ১০ মণ পাট পাওয়া যায়। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর