২ অক্টোবর, ২০২৪ ১৫:০৫

মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তরমুজ চাষের উপযোগী সময় হলেও আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় তরমুজ চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। 

দেখা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের উদ্দমী যুবক কৃষক, মঞ্জুর আলম, আজিমুল হক, লুৎফর রহমান ও সালাউদ্দিন আহমেদ। তারা চার জন মিলে সাড়ে পাঁচ একর জমি লিজ নিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেছেন ব্ল্যাক বেবী নামে বিদেশি জাতের তরমুজ। এ পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে চারা রোপনের মাত্র ৫০-৫৫ দিনে ফলন ও এসব তরমুজ সুস্বাদু হওয়ায় এর বাজার চাহিদা বেশি। এতে খরচের তুলনায় বেশি লাভবান হচ্ছেন তারা। 

এখানকার উৎপাদিত একেকটি তরমুজের ওজন প্রায় ২ থেকে ৪ কেজি। আর এসব তরমুজ স্থানীয় বাজারসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তাদের এমন সফলতা দেখে আশপাশের স্থানীয় কৃষকরাসহ অন্যান্য জেলার কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় তরমুজ চাষে।

স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এভাবে আগাম তরমুজ চাষ করে মঞ্জুর, আজিমুল অনেক লাভবান হচ্ছেন। এর আগেরও তারা বেশ কয়েকজন মিলে এই জাতের তরমুজ চাষ করেছিলেন। এবারও করেছেন।আগামীতে আমরাও এভাবে তরমুজ চাষ করার চিন্তা করছি। 

তাসনিম আলম লাবিব বলেন, মঞ্জুর চাচা আমাদের এইদিকে আধুনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আমরা দেখছি তাদের খরচের তুলনায় লাভ হচ্ছে ভালো। আগামীতে আমরাও এভাবে তরমুজ চাষ করবো ইনশাআল্লাহ। 

কৃষি উদ্যোক্তা মো. মঞ্জুর আলম বলেন, এভাবে তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও চাষ করেছি তরমুজ। মালচিং পদ্ধতিতে চাষের ফলে অতি বৃষ্টি ও খড়া থেকে রক্ষা এবং রোগ বালাই কম হয়। এছাড়াও মাটিতে চাষ করা তরমুজের তুলনায় মাচায় চাষকৃত তরমুজ বেশি সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়। ইতোমধ্যে দের একর জমির ফল প্রথম হারভেস্টেই দুই লাখ টাকা বিক্রয় করা হয়েছে। দ্বিতীয়বারে আরও এক লাখ টাকার তরমুজ বিক্রয়ের আশা রয়েছে। 

আরেক কৃষি উদ্যোক্তা আজিমুল হক বলেন, আমরা চারজন মিলে প্রায় সাড়ে ৫ একর জমিতে ব্ল্যাক বেবী জাতের তরমুজ মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেছি। এই পদ্ধতিতে খরচের তুলনায় লাভ বেশি হয়। একেকটি তরমুজ ২-৪ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত এসব ফল স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে যাচ্ছে। এবার সাড়ে ৫ একর জমির তরমুজে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা লাভবান হওয়ার আশা করছি আমরা। আর সব মিলিয়ে আমাদের খরচ হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আর্থিকভাবে লাভ পাওয়া কৃষকরা এসব তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন ও আবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আগামীতে এর চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।
 
জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১ সালে মালচিং পদ্ধতিতে জেলায় মাত্র ৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল বিদেশি জাতের এসব তরমুজ। ২০২৪ সালে এর চাষ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হেক্টরে। লাভ বেশি থাকায় মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় সাত গুণ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ হেক্টর জমি।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর