বাংলাদেশে সাপ দেখলেই আতঙ্কে মানুষ যেভাবে মেরে ফেলতে তৎপর হয়ে ওঠে, সেই চিরাচরিত ধারায় ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছেন ফেনীর ফুলগাজীর তরুণ নজরুল ইসলাম অয়ন। ‘সাপের বন্ধু’ নামে খ্যাত এই ২৫ বছর বয়সী যুবক একাই গত চার বছরে ১০ প্রজাতির প্রায় ৩০০ সাপ উদ্ধার করে নিরাপদে অবমুক্ত করেছেন প্রকৃতিতে। শুধু সাপ নয়, তিনি উদ্ধার করেছেন বিলুপ্তপ্রায় চিতাবিড়াল, লক্ষ্মীপেঁচা, কচ্ছপ, ঈগল ও টিয়াপাখির মতো নানা বিপন্ন প্রাণীও।
অয়ন বর্তমানে ফেনীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং 'ওয়ার্ল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ'-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার এই প্রাণিপ্রেম শুরু হয়েছিল ছোটবেলা থেকেই। সাপ দেখলেই তার মধ্যে জন্ম নিত মায়া, আর সেগুলোর মৃত্যু দেখলে হৃদয়ে বাজতো হাহাকার। পরিবারের আপত্তি আর সামাজিক কুসংস্কারের পরোয়া না করে, তিনি নিজেই ইউটিউব-ফেসবুক ও অভিজ্ঞ সাপ উদ্ধারকারীদের কাছ থেকে শিখে নেন সাপ উদ্ধার ও অবমুক্ত করার প্রক্রিয়া।
রাত-বিরাতে ফোন পেলে ছুটে যান যেকোনো জায়গায় সাপ উদ্ধার করতে। বিনিময়ে নেন না কোনো পারিশ্রমিক—সবই নিখাদ প্রাণিপ্রেম থেকে। অয়ন বলেন, 'সাপ অত্যন্ত সুন্দর প্রাণী হলেও আমাদের দেশে বেশ অবহেলিত। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাপের গুরুত্ব অনেক, কিন্তু সেটি আমরা বুঝি না।'
শুরুতে অনেকে তাকে ‘সাপুড়ে’ বলে ট্রল করলেও এখন তার কাজের প্রশংসা করেন সবাই। গ্রামের মানুষ এখন সাপ দেখলে মেরে না ফেলে তাকে খবর দেয়। বশিকপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমীন চৌধুরী জানান, 'অয়ন এখন আমাদের এলাকার গর্ব। তার কারণে অনেকেই এখন সাপ সম্পর্কে সচেতন।'
সংগঠনের পরিচালক ইসমাইল মিথুন বলেন, 'অয়নের মতো স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের দেশের শক্তি। মানুষ যদি সাপ না মেরে আমাদের খবর দেয়, তাহলে আমরা সেগুলো উদ্ধার করে বনে অবমুক্ত করব।'
বিডি প্রতিদিন/মুসা