ঢাকা, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

লকডাউন না করেও ইরান করোনা ইস্যুতে কিভাবে সফল হচ্ছে?
কামরুজ্জামান নাবিল
ফাইল ছবি

ইরানে কিছুদিন আগেও করোনাভাইরাসে ২৪ ঘন্টায় যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১৫০ ছিল তা এই মুহুর্তে অনেকটায় কমের দিকে। যদিও এটি বলার সময় এখনও আসেনি যে, ইরানে করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। 

পুরো ইরান করোনা ইস্যুতে এক সপ্তাহের বেশি লকডাউন ছিল না। তাছাড়া লকাডাউন ছিল এক শহরের গাড়ি অন্য শহরে প্রবেশ করতে পারবে না এমন তবে নিজ শহরের গাড়ি হলে তা প্রবেশের অনুমতি ছিল। তবে যে শহরগুলোতে জনগণ ভ্রমণে বেশি যায় সে শহরগুলো প্রথম থেকেই পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছিল। 

এ নিয়ে কয়েকটি বিষয় বলতে চাই-    প্রথমত, ইরানে প্রথম যখন করোনা আসে তখন স্বাস্থ্য দিক-নির্দেশনা স্বরূপ সবাইকে নিয়মিত হাত ধোঁয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এবং তার পরের দিন বিবিসি নিউজের একটা নিউজ চোখে পড়ে যেখানে বলা হচ্ছে, ইরানের রাজধানী তেহরানে গতকাল এত ভাগ পানির ব্যবহার বাড়ছে। এটা মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, ইরানের জনগণ হাত ধোঁয়ার বিষয়ে সচেতন হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, কিছুদিন আগে ইরানিদের অন্যতম উৎসব ফার্সি নববর্ষের ছুটি চলছিল। এ উৎসবে ইরানিদের বাইরে ঘুরতে যাবার ঐতিহ্য পুরনো দিনের। এর মাঝে একটি নিউজ সাইটে একটি নিউজে বলা হচ্ছে, মোবাইলের ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে বাসার বাইরে জনগণের চলাচল বৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। 

তৃতীয়ত, ইরানের হাসপাতালগুলোতে যে বেড এবং আইসিইউ সংখ্যা রয়েছে কিছু প্রদেশ ছাড়া যেগুলোতে করোনার প্রকোপ অনেক বেশি ছিল তা করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আছে। যদিও এর পরেও কঠিন অবস্থা মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রদেশে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে এখন পর্যন্ত কোনো ইরানি আইসিইউ অথবা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তা আমার জানা নেই বা নিউজে দেখিনি। 

উপরের কথাগুলো বলা এ কারণে যে, একটি মহামারী লড়তে আর যে ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু নিয়েই আমরা অবগত না সেক্ষেত্রে এমন যুদ্ধে লড়তে আমাদের সকল ক্ষেত্রে থেকে সহায়তা নেয়া যেতে পারে আগামীর অবস্থা বুঝতে। 

এবার আসতে চাই কিভাবে ইরানের পক্ষে সম্ভব হলো এত দ্রুত পুরোপুরি না হলেও করোনাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা ?  

প্রথমত, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধানদের করোনা আসার দুই থেকে তিন দিনের মাঝে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়া। এবং দ্রুত করোনা রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসা সেন্টার ঘোষণা দেয়া। 

দ্বিতীয়ত, ২ থেকে ৩ দিনের মাঝে সারাদেশের চিকিৎসকদের কাছে করোনা নিয়ে স্বচ্ছ ধারনা, দিক-নির্দেশনা ও প্রটোকল পৌঁছিয়ে দেয়া। এবং চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সুরক্ষার পিপিই দেয়া।  

তৃতীয়ত, ইরানে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৫৯৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এবং এ সুস্থ হবার পেছনে চিকিৎসকদের যে মূল অবদান আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাথে সাথে রোগীদের কি ট্রিটমেন্ট দিলে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন সেগুলো নিয়ে গবেষকদের গবেষণাও কিন্তু এক্ষেত্রে অবদান রাখছে। প্রটোকল আপডেট হচ্ছে। 

চতুর্থত, ইরানের সর্বশেষ হিসেবে, প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ বাসায় অবস্থান করছেন এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। এটিও কিন্তু একটি পজিটিভ দিক করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে।    

লেখক: শিক্ষার্থী, ডক্টর অফ মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান।

বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর