আজকাল যখনই কিছু পড়তে বা লিখতে বসি, কিছুক্ষণ পরই মাথার মধ্যে কোথাকার কোন সাজঘর থেকে দু’খানা নূপূর-পরা পা, মাথার মঞ্চে চলে আসে নাচতে নাচতে। কীরকম রিম্ঝিম্ শব্দ হতে থাকে। সেই শব্দে একধরণের সম্মোহন জাগায়। চোখের সামনের সব দৃশ্য মুছে গিয়ে ফুটে উঠে এক শূন্যতার দৃশ্য। কেবল শব্দ আর শব্দ। রিম্ঝিম্ রিম্ঝিম্ -দু’খানা নাচের পা ঘুরছে, উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম দিচ্ছে সব গুলিয়ে। সেই শব্দে সব বোধ বুদ্ধি ডুবে যায়।
পাখিদের মতো মানুষের পালক নেই যে উড়ে গেলেও দু’একটা পালক পড়ে থাকবে। কিন্তু পালকের মতোই হালকা মিহি নরম কী যেনো সব পড়ে আছে চারিদিকে টের পাওয়া যায়। হাওয়া দিলে সেগুলো উড়ে উড়ে বেড়ায়। চোখে দেখা যায় না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখা যায় জানালা দিয়ে জ্যোৎস্না এসে বিছানা ভাসিয়ে দিচ্ছে। সেই জ্যোৎস্নার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকলে হঠাৎ দেখতে পাই হালকা কুয়াশার মতো কী যেন ভেসে আছে। ঘুরছে ফিরছে উঠছে নেমে আসছে। এসবই হয়তবা মানুষের অদৃশ্য পালক।
জানালার কাছে একটা নিমডাল ঝুঁকে পড়েছে। বৃষ্টিতে সতেজ পাতা। তাতে রোদ পড়ে সবুজ আলো দিচ্ছে চারধারে। পোকামাকড়ের আনন্দের শব্দ ওঠে চারিদিকে। একটা গিরগিটি জানালার শিক বায়। সতেজ নিমগাছের ডালপালার ফাঁক দিয়ে দূরের মেঘহীন আকাশ দেখা যায়। চারদিকে উড়াউড়ি করে মানুষের ফেলে যাওয়া পালক। জানালা দিয়ে মেঘভাঙা রোদ এসে পড়ে। চারদিকে আলোয় আলোময়। চড়ুই পাখিরা উড়ে আসে ঘরে। আসে এক-আধটা মৌমাছি, ফড়িং। পিঁপড়েরা দেয়ালে বায়, গিরগিটি আসে, সবুজ পোকা একটা জানালার শিক বেয়ে ওঠে।
ভেজা জঙ্গলে রোদ পড়ে একটা বুনো মিষ্টি গন্ধ ছড়াতে থাকে। বকুলগাছ যখন অন্ধকারে তার বকুল ঝরায় তখন সেই পতনশীল বকুলের শব্দে গন্ধে পুরনো সব কথা জীবন্ত হয়ে ওঠে। রাতে অদ্ভুৎ সব স্বপ্ন দেখি। কোনো মাথা মুন্ড নাই যার। এমন এমন সব মানুষদের এমন সব অবস্থায় দেখতে পাই যা কখনো ভাবিনি। অকল্পনীয়, অচিন্তনীয়, বিদঘুটে, হাস্যকর সব স্বপ্ন। স্বপ্নে বিদঘুটে সব ব্যাপার ঘটে। এভাবেই এক একটা দিন যায়, দুপুর গড়ায়, ভোর নামে। আর প্রতিদিন একটু একটু করে মাথায় মধ্যে একটা ভুতুড়ে আকাশ ঢুকে পড়ে..।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা