ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

তোলাবজি চলবে না, মমতার হুশিয়ারি
অনলাইন ডেস্ক

'আমি খেটে মরব, আপনারা তোলাবাজি, ধান্দাবাজি করবেন? চলবে না৷ ''আপনারা' মানে দলের কিছু নেতা-মন্ত্রী৷ বললেন বটে সাত-আটজনকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে অদৃশ্য চাবুক চালালেন গোটা দলের ওপরেই৷ আর দলকেই বললেন ভালো মানুষের খোঁজ করতে৷ দরকার হলে অন্য দল থেকে ভালো মানুষ এলেও আপত্তি নেই মমতার৷

শনিবার কালীঘাটের বাড়িতে মমতা ছিলেন রুদ্রমূর্তিতে৷ তাঁর সামনে ছিলেন নদীয়ার প্রায় দুইশ তৃণমূল নেতা৷ গত সন্তাহে কালীঘাটের বাড়িতে হুগলির নেতারা পড়েছিলেন নেত্রীর ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখে৷ এদিন তোলাবাজি, দলাদলি, অসৎ সঙ্গের জন্য তাঁর কোপে পড়ল নদিয়া তৃণমূল৷ তোপের মুখে যাঁরা পড়লেন, তাঁরা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান৷ অনেকের আবার লালবাতি আর ভেঁপু বাজানোর নেশা পেয়ে বসেছে৷ কিন্তুি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের উঠান থেকে বেরনোর সময় মুখ কাঁচুমাচু সেই নেতা-মন্ত্রীদের৷ সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখেই লজ্জা ঢাকতে কেউ বাইরে বেরিয়ে দাবি করলেন, 'দিদি আমাকে কিছু বলেননি৷'

এদিন নদীয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে বৈঠকে চরম অপ্রস্ত্তত হতে হয়েছে৷ সূত্রের খবর, ছেলের অয়ন দত্তের জন্য মুখ পুড়েছে বাবার৷ নদীয়া জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অয়ন৷ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ এসেছে, অয়নের টিম কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রিপল আইটিতে তোলাবাজি করছে৷ স্বাভাবিক ভাবেই তার দায় চেপেছে বাপ-বেটার ঘাড়ে৷ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, 'এখনই এসব বন্ধ করো৷' অনেকে বলছেন অয়ন উপলক্ষ মাত্র৷ আসলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বার্তাটি দিয়েছেন গৌরীশঙ্করকেই৷ অগোছালো সংগঠন এবং দলবাজি থামাতে ব্যর্থতা নিয়েও জেলা সভাপতিকে কথা শুনতে হয়েছে নেত্রীর কাছে৷ তেহট্টের তৃণমূল নেতা তাপস সাহার সঙ্গে গৌরীবাবুর বিবাদ অনেক দিনের৷ ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তেহট্ট মহকুমার ফলাফলে তার ছাপও পড়েছিল৷ তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে গৌরীশঙ্কর পরাজয় সুনিশ্চিত করেছিলেন তাপস৷ আসনটি জিতেছিল সিপিএম৷ তাপস দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে গৌরীকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে দিয়েছিলেন৷ মহকুমার অন্য দুই বিধানসভা পলাশিপাড়া এবং করিমপুরেও জিতেছিল সিপিএম৷ বিবদমান এই দুই নেতাকে সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, 'এবার ওই সিটগুলো পাব তো? আমার কিন্তু নদীয়ায় সতেরোতে সতেরোটাই চাই৷' সূত্রের খবর, প্রবল চাপের মুখে গৌরীমুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছেন, তাঁকে ১৭ দিন সময় দেওয়া হোক৷ এর মধ্যেই তিনি জেলার অগোছালো সংগঠন গুছিয়ে নিতে পারবেন৷

তোলাবাজি প্রসঙ্গেই আরও তেতো কথা হজম করতে হয়েছে কল্যাণীর বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে৷ সূত্রের দাবি, তাঁকেও নেত্রী মুখের উপর বলেছেন, 'তুমি তোলাবাজিকে প্রশ্রয় দিচ্ছো৷' বছরখানেক আগে নদীয়া জেলার কর্মী সম্মেলনের সময় দলের এক শীর্ষ নেতা রমেন বিশ্বাসের কেন্দ্র সম্পর্কে বলেছিলেন, 'এখন ভোট হলে কল্যাণীতে আমরা আড়াই হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকব৷' এবার সেই কেন্দ্রেরই বিধায়ক খোদ দলনেত্রীর কাছে তোলাবাজিতে মদত দেওয়ার অভিযোগে ভৎসনা শুনলেন। জেলার প্রভাবশালী নেতা এবং মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস সম্পর্কে দলনেত্রীর কাছে রিপোর্ট, তিনি দলেরই এক কাউন্সিলর (নেত্রীর ভাষায় যিনি ক্রিমিন্যাল) শিশির কর্মকারের সঙ্গে একটু বেশিই দহরম মহরম করছেন৷ কিন্তু উজ্জ্বলের এই ছায়াসঙ্গীকে রাজনীতিক হিসেবে নয়, বড় মাপের প্রোমোটার হিসেবেই লোকে এলাকায় বেশি চেনে৷ মুখ্যমন্ত্রী উজ্জ্বলকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, 'ক্রিমিন্যালদের নিয়ে ঘোরা বন্ধ করুন৷ কাজেও আর একটু বেশি মনযোগ দিন।'

সূত্র: এই সময়

বিডি-প্রতিদিন/২০ ডিসেম্বর, ২০১৫/মাহবুব

 



এই পাতার আরো খবর