ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

'সমকাম রায়' পুনর্বিবেচনা করবে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
অনলাইন ডেস্ক

ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া আইনের জেরে ধাক্কা খাচ্ছে ব্যক্তির অধিকার এবং মর্যাদা— সমকাম থেকে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ তকমা মুছে ফেলার আর্জিতে সাড়া দিয়ে আজ, মুক্ত এজলাসে এ কথা মেনে নিলেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি। আর সেই প্রেক্ষিতেই আরও এক বার শীর্ষ আদালতে গৃহীত হল ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাকে ‘অপরাধমুক্ত’ করার আর্জি।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ এই মামলাটি গ্রহণ করে সবিস্তার শুনানির জন্য পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে পাঠিয়েছে। আর তাতেই আশার আলো দেখছেন সমাজকর্মী থেকে আইনজীবীরা। 

এর আগে সমকামিতার প্রশ্নে আইন  বদলের সিদ্ধান্ত সংসদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সংসদ নীরবই থেকেছে। লাগাতার আবেদনের পর সেই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি গ্রহণ করল সুপ্রিম কোর্ট। মুক্ত এজলাসে আজকের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীরা। রায় পুনর্বিবেচনায় শীর্ষ আদালত সায় দেওয়ায় উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি তারা। ছিলেন তাবড় আইনজীবীরাও। সমকামিতাকে ‘অপরাধমুক্ত’ করার পক্ষে এ দিন সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। আদালতে তিনি বলেন, এই রায়ে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক সংস্কার তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এবং যৌনতা কখনও সংস্কারাচ্ছন্ন হওয়া উচিত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘দু’জন প্রাপ্তবয়স্কের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অসাংবিধানিক।’’ সিব্বলের বিরোধিতা করে ‘অল ইন্ডিয়া চার্চেস অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড’।

১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকারের হাতে তৈরি হওয়া এই ৩৭৭ ধারা অনুসারে, সমকাম ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌন সম্পর্ক’। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট এই ধারার একটি অংশকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করে। জানায়, দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে স্বেচ্ছায় সমকামী যৌন সম্পর্ক অপরাধ নয়। যদিও ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাল্টা একটি রায়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়ে স্বমহিমায় ফিরে আসে সমকামের ‘অপরাধ’ তকমা। সেই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি এবং এস জে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ স্পষ্টতই ধারাটি বাতিলের দায়িত্ব ঠেলে দিয়েছিল সংসদের দিকে। আদালত জানিয়েছিল, আইন বদল করতে হলে আলোচনা-বিতর্ক হোক সংসদে। যদিও তার পরে সংসদে এ নিয়ে কার্যত কোনও কথাই হয়নি। সম্প্রতি কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর ৩৭৭ ধারাকে ‘অপরাধমুক্ত’ করতে লোকসভায় বেসরকারি বিল পেশ করেন। সেই বিল পাশ হয়নি। অপরাধমুক্ত হয়নি সমকামী সম্পর্কও।

তবে সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য লাগাতার আবেদন করতে থাকেন সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সমাজকর্মীরা। সব মিলিয়ে আটটি পুনর্বিবেচনার আর্জি জমা পড়ার পর মামলাটি শুনতে রাজি হয় শীর্ষ আদালত। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে বিশ্ব জুড়ে সমকামের প্রশ্নে পাল্টেছে অনেক কিছুই। গণভোটের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডে আইনি বৈধতা পেয়েছে সমকামী বিয়ে। ২০১৫ সালের জুনে আমেরিকার সব রাজ্যে আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে সমকামী বিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি গ্রহণ করায় তাই আশা দেখছে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। শীর্ষ আদালতের এই সায়ে আশা প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস নেতারাও। তবে ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে ৩৭৭ ধারা বদলের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের দিকে ঠেলে দেওয়ার সময়ে সরকারে থেকেও কেন আইন বদলের পথে এগোয়নি কংগ্রেস, সেই প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে। যদিও রাজনীতির অলিন্দে কান পাততে চাইছেন না সমাজকর্মীরা। বরং, সমানাধিকার এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে আইনি মর্যাদা দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর