ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বাসচালকের ছেলের হাতেই লন্ডন
অনলাইন ডেস্ক

দুই যুযুধান। একজন বাসচালকের ছেলে। অন্যজন কোটিপতি। সাধারণের ভিড়েই কেটেছে একজনের শৈশব। আর লন্ডনের টিউব সম্পর্কে অন্য জনের তেমন কোনও ধারণাই নেই।

প্রথম জন লেবার পার্টির সাদিক খান। দ্বিতীয় জন কনজারভেটিভ দলের জ্যাক গোল্ডস্মিথ। লন্ডনের মেয়র পদের নির্বাচনে ইতিহাস গড়ে জিতে গেলেন সাদিকই। তিনিই ব্রিটিশ রাজধানীর প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম মেয়র।

শুক্রবার সকাল আটটা থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ভোট গণনা। কিছুক্ষণ পর থেকেই চিত্রটা সাফ হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করে নেয় জ্যাক শিবির।

১৯৪৭-এর ভারত ভাগ হওয়ার পরে সাদিকের দাদা-দাদী ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি দেন। সাদিক জন্মানোর আগেই পাকিস্তান থেকে ব্রিটেনে চলে আসেন সাদিকের মা-বাবা। কিন্তু বিদেশে তো চলে এলেন, পেট চালাবেন কী করে! সাদিকের বাবা বেছে নিলেন বাসচালকের কাজ। আর মা হলেন দর্জি। তিন কামরার ছোটখাটো সরকারি আবাসনে অর্থকষ্ট ছিল সাদিকের শৈশবের নিত্য সঙ্গী। তাই ছোট থেকেই কিছু একটা করে দেখানোর তাগিদ ছিল তাঁর।

অন্যদিকে, পাক ক্রিকেটার ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডস্মিথের ভাই জ্যাক। ব্যবসায়ী পরিবারে তাঁর জন্ম। তাই ছোট থেকেই বিলাসবহুল জীবনযাপনেই অভ্যস্ত তিনি। গড়পড়তা মানুষের মতো টিউব রেল ব্যবহার করেন না। হয়তো দেখতে যান না ফুটবল ম্যাচও। তাই লন্ডনের অন্যতম যান, টিউব রেল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে নাজেহাল হয়েছিলেন জ্যাক। ঠিক যেমন ফুটবল ক্লাব নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও জ্যাক থাকেন এক প্রকার নির্বাক।

তবে এ সবের জন্যই কি ভোট বাক্সে এগিয়ে থাকছেন সাদিক?

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য আরও যুক্তি দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারে সাদিকের বিরুদ্ধে ভাল রকম কুৎসা রটিয়েছিলেন জ্যাক। সাদিকের ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, সাদিক পাকিস্তানি। তিনি কট্টরপন্থী। তাই জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ থাকতে পারে। আর এই প্রচারে জ্যাক ‘সেমসাইড’ দিয়ে ফেলেছেন বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিজের দিকে টানতে যে প্রচার পুস্তিকা বিলি করেছেন জ্যাক, সমালোচনা হয়েছে তা নিয়েও। সেই পুস্তিকায় জ্যাক দাবি করেছেন, উনি ভারতের বন্ধু। নভেম্বরে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে উনিই দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় ও-মুখো হননি সাদিক খান। এর পাশাপাশি জ্যাক বলেন, অনেক সময়েই সোনার গয়নার জন্য ভারতীয়দের উপর হামলা করে দুষ্কৃতীরা। তিনি ডাকাতদের হাত থেকে তাঁদের বাঁচানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

কিন্তু এতে কাজ হয়েছে উল্টো। ভারতীয়রা বরং বেশ অসন্তুষ্টই হয়েছেন। তাঁদের মতে, ওই পুস্তিকা পড়ে মনে হয়েছে গয়নার জন্য ভারতীয়রাই যেন শুধু ডাকাতদের লক্ষ্য। বাকি লন্ডনবাসীর মতো রাস্তাঘাট বা যানবাহনের সমস্যা তাঁদের নেই। কারণ সে সবের কোনও উল্লেখ নেই পুস্তিকায়।

পেশায় আইনজীবী সাদিক স্বীকারই করে নিয়েছেন, পেশার তাগিদে অনেক সময়েই অপরাধীদের জন্যও লড়তে করতে হয়েছে তাঁকে। তবে জ্যাকের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘সব সময়েই আমি কট্টরবাদের বিরোধী।’’ লন্ডনবাসীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা ছিল, মেয়র হলে আগামী চার বছর টিউব ভাড়ার কোনও রকম পরিবর্তন করতে দেবেন না তিনি। আর লন্ডনে তৈরি হবে নতুন বাড়ি।

ভোটের ফল প্রকাশের পরে সাদিককে অভিনন্দন জানিয়েছেন জেমাইমা। টুইটারে তাঁর বক্তব্য, ‘‘জ্যাকের প্রচারে ওর আসল স্বভাব প্রতিফলিত হল না। সেটাই দুঃখের।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ মে, ২০১৬/ আফরোজ



এই পাতার আরো খবর