ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ফ্ল্যাটে শিশুপুত্রকে নিয়ে পুড়ে মরল মা, দেওয়ালে লেখা ‘স্বামীই দায়ী’
অনলাইন ডেস্ক

চারতলা বিল্ডিংয়ের একতলার একটি বন্ধ ঘর থেকে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। সঙ্গে নাকে আসছে কোন কিছু পোড়ার বাজে গন্ধ। কয়েক ঘণ্টা ধরে এমন চললেও প্রথমে আমলে নেননি আশপাশের বাসিন্দারা।  অবশেষে ঐ এলাকায় নিজের বাড়িতে ফেরার সময়ে এসব দেখে অন্যদের ডেকে আনে এক কিশোর। 

দরজা ভেঙে দেখা যায়, মেঝেতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক মহিলা। কয়েক হাত দূরে তাঁরই সাড়ে সাত বছরের ছেলের দগ্ধ দেহ। সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে সার্ভে পার্ক থানার বৈকুণ্ঠ সাহা লেনে। 

পুলিশের দাবি, মৃতদেহগুলির পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া একটু চিরকুট এবং দেওয়ালে রঙ পেন্সিলে লিখে অর্পিতা ঘোষ (৩৫) নামের ওই মহিলা তাদের মৃত্যুর জন্য স্বামীকেই দায়ী করে গেছেন। তার ভিত্তিতে মৃতার স্বামী তরুণকান্তি ঘোষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পরে অর্পিতাদেবীর দাদাও পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, ন’বছর আগে বিয়ে হয়েছিল অর্পিতার। স্বামী পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তরুণ সল্টলেকের এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ছেলে অর্ক লেক গার্ডেন্সের রামমোহন মিশন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। এ দিন ওই মহিলার দাদা হাওড়া শিবপুর মন্দিরতলার বাসিন্দা অচিন্ত্য ঘোষ পুলিশকে জানান, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন তরুণ। ছেলেকে নিয়ে বারবার আত্মহত্যার প্ররোচনা দিতেন বলেও অভিযোগ করেন অচিন্ত্য। স্থানীয়েরা জানান, ওই পরিবার খুব একটা এলাকায় মিশতেন না।

এদিন বাকিদের ডেকে এনেছিল ঐ এলাকার দোতলার বাসিন্দা দশম শ্রেণির ছাত্র আলেখ্য পোদ্দার। সে জানায়, বিকাল পাঁচটার দিকে মামার বাড়ি থেকে ফেরার সময়ে খেয়াল করে আবাসনে কালো ধোঁয়া। পোড়া গন্ধও বেরোচ্ছে। বেশি ধোঁয়া বেরোচ্ছে অর্কদের ফ্ল্যাট থেকে। এর পরেই মাকে বিষয়টি জানায় আলেখ্য। খবর দেয় এলাকার অন্য বাসিন্দাদেরও। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অর্কদের ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। শেষে ফ্ল্যাটের পিছন দিকে শৌচাগারের জানলা দিয়ে দেখা যায়, ঘর জুড়ে কালো ধোঁয়া। মেঝেতে দগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে মা-ছেলের মৃতদেহ। 

সেই সময়ে মা আল্পনা মাইতির সঙ্গে পৌঁছায় অর্কর এক বন্ধু। একসঙ্গে সাঁতারে যেতে অর্ককে ডাকতে এসেছিল অর্কর ঐ বন্ধু। ফ্ল্যাটের সামনে প্রতিবেশীদের ভিড়, কালো ধোঁয়া দেখে তুষারবাবুকে ফোন করেন আল্পনাদেবী। খবর পেয়ে অফিস থেকে চলে আসেন  তরুণ। এরই মধ্যে পৌঁছায় পুলিশও।

পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে স্থানীয়রা ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দেখেন, ডাইনিং রুমে সোফার সামনে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে অর্পিতা, হাত দুয়েক দূরে শৌচাগার ও শোয়ার ঘরের দরজার মাঝে পড়ে আছে অর্ক। অর্পিতার দেহের পিছন দিকের দেওয়ালে রং পেন্সিলে লেখা রয়েছে ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য আমার স্বামী দায়ী’। 

হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরাও ঘটনাস্থলে যান। তাদের অনুমান, প্রথমে ছেলেকে মেরে, তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে নিজেও গায়ে আগুন দেন অর্পিতা।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি প্রতিদিন/ ১৭ মে, ২০১৬/ হিমেল-২৪



এই পাতার আরো খবর