ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

খবর আনন্দবাজার পত্রিকা
ওবামার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে অভদ্র আচরণ চীনাদের
অনলাইন ডেস্ক
বেইজিং বিমানবন্দরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

এত বড় সুযোগ কখনও হাতছাড়া করতে পারে চীন? তার জন্য শিকেয় উঠলই-বা কূটনেতিক শিষ্টাচার! অন্য দেশের প্রেসিডেন্ট দেশে এলে যে ভাবে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হয়, সে কথা ভুলে গেলেই বা কী ক্ষতি হয় চীনের? না হয় কণ্ঠরোধই করা হল সংবাদ মাধ্যমের! আরও এক বার। না হয় সাংবাদিক বলে অভব্য আচরণের হাত থেকে রেহাই পেলেন না নারীরাও!

‘জি-২০’ জোটের বৈঠকে যোগ দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শনিবার হাংঝাউ বিমানবন্দরে নামলে, নিরাপত্তার অজুহাতে যাবতীয় কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে শিকেয় তুলতে একটুও ভুল করেনি চীন! বেইজিংয়ের যেটা ‘স্বাভাবিক’ মনে হয়েছে, সেটাই অস্বাভাবিক মনে হয়েছে বিদেশি অতিথিদের কাছে। আর সে কথা বলতে গেলে চীনের শীর্ষস্তরের নিরাপত্তা কর্তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর-সঙ্গী অতিথি সাংবাদিক ও হোয়াইট হাউসের আমলাদের দু’-চার কথা শুনিয়ে দিয়েছেন। অতিথি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনেই, বেইজিং বিমানবন্দরে। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ‘ড্রাগনের দেশে’ এটাই কেতা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনেই চিৎকার করে এক নারী সাংবাদিককে বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘‘এটাই চীন। এটাই আমাদের দেশ। আর এটা আমাদের বিমানবন্দর।’’

‘জি-২০’ জোটের বৈঠকে যোগ দিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান আসছেন বলে হাংঝাউ বিমানবন্দরের বজ্র আঁটুনি ছিল এমনটাই, যাতে কোন ‘ফস্কা গেরো’ না থেকে যায়। পুলিশ আর নিরাপত্তা অফিসারদের দিয়ে গোটা বিমানবন্দরটাকে এমনভাবে ঘিরে ফেলা হয়েছে, যাতে মাছিও বের হতে না পারে! কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বেইজিংয়ের নিরাপত্তা কর্তারা ভুলে গিয়েছিলেন, অতিথি রাষ্ট্রপ্রধান আর তাদের সফর-সঙ্গীদের মধ্যে ‘মাছি’ খোঁজাটা কোনও কূটনৈতিক শিষ্টাচারে পড়ে না। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান ‘এয়ারফোর্স-ওয়ান’ হাংঝাউ বিমানবন্দরে নামতেই চীনের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা প্রায় হামলেই পড়েন বিমানটির ওপর। বিমানের সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার বেশ কিছুটা পরে একে একে বিমান থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস আর হোয়াইট হাউসের মিডিয়া সেলের সাংবাদিক ও কর্তাব্যক্তিদের। সব বিদেশ সফরেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর-সঙ্গী তারা। আর তাদের কাজটা শুরু হয়ে যায় বিমানের দরজা খুলে নামার জন্য প্রেসিডেন্ট সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই। শনিবার সেটাই করতে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের সফর-সঙ্গী মার্কিন সাংবাদিকরা। চীনের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ধমকের সুরে তাদের বলেন, ‘‘কলম-টলম বন্ধ করুন। এখানে ও সব চলবে না। আপনারা ওর (ওবামা) থেকে দূরে চলে যান।’’ তাতে কিছুটা বিব্রত হয়ে হোয়াইট হাউসের এক নারী অফিসার বলেন, ‘‘এটা মার্কিন বিমান। আর উনি (সামনে ওবামাকে দেখিয়ে) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।’’

‘‘তো? তাতে হলটা কী?’’, পাল্টা জবাব দেন চিনা নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘‘এটাই চীন। এটা আমাদের দেশ। এটা আমাদের বিমানবন্দর।’’ তারপর হোয়াইট হাউসের ওই নারী অফিসারের কাঁধে ঝোলা হ্যান্ডব্যাগটি নেড়েচেড়ে দেখেন চীনা নিরাপত্তা অফিসার। মার্কিন প্রেসিডেন্টের থেকে তাদের দূরত্ব তৈরি করতে ওই চীনা নিরাপত্তা অফিসার একটি নীল দড়ি দিয়ে ‘ব্যারিকেড’ গড়ে তোলেন! সেই সময় মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রাইসকে কোন কারণে ইশারায় ডাকেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রাইস দড়ি তুলে ওবামার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তার পথ আটকান ওই নিরাপত্তা অফিসার। রাইসের সঙ্গে কিছুটা বচসাও হয় তার। তখন মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের কর্তারা এসে ওই চীনা নিরাপত্তা অফিসারকে বোঝাতে থাকেন। তখনই রাইস যেতে পারেন ওবামার কাছে। রাইস পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটবে, ভাবতেও পারিনি।’’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/মাহবুব

 



এই পাতার আরো খবর