ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সুন্দরবনে বাঘের মন ফেরাতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রয়াস
অনলাইন ডেস্ক

সুন্দরবনে বাঘ-বাঘিনীতে বনিবনা নেই। কেউ কারও দিকে তাকায় না। প্রেমহীন নিষ্প্রাণ ব্যাঘ্র সংসার। মিলনের অভাবে পরিবারে নতুন সদস্যের আকাল। কমতে কমতে মিলিয়ে যাচ্ছে বাঙালির গর্ব, রয়েল বেঙ্গল টাইগার। মানুষের তেজের তুলনা তারাই। মনমরা বাঘের মন ফেরানোর রাস্তা নেই। মানুষ নয় যে বোঝান যাবে। তারা স্বেচ্ছায় চলে, স্বাধীনতায় বাঁচে। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের বন দফতরের কপালে ভাঁজ। সমাধান সূত্র খুঁজতে মরিয়া। 

সুন্দরবনের তিন ভাগ বাংলাদেশে। এক ভাগ পশ্চিমবঙ্গে। দু’দেশের মধ্যে বাঘেদের যাতায়াত অবাধ। তাদের তো পাসপোর্ট, ভিসা লাগে না। গোটা সুন্দরবনই বাঘেদের দেশ। আয়তন কম নয়। ৩৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার, ব্যাঘ্রসুমারি যৌথভাবে। নইলে গোনায় ভুল হবে। বাঘেরা এদিক থেকে ওদিকে যেতে সময় নেয় না। দরকারে বন ছেড়ে গৃহস্থের ঘরে ঢুকতেও পিছপা নয়। কী করবে! আহার না জুটলে গ্রামের হাঁস, মুরগি, ছাগল ভরসা। মানুষের মাংস পছন্দ নয়। ক্রোধের বশে মানুষ মেরেও ফেলে রেখে দেয়। খায় না। 

বাংলাদেশের পরিবেশ-বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উদ্বিগ্ন। যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দৌলতে বাঙালির আন্তর্জাতিক সম্মান, তারা না বাঁচলে মুখ তো পুড়বেই। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বিশ্ব ব্যাঘ্র সম্মেলনে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব গৃহীত। ২০২২-এর মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। হাতে মাত্র ছ’টা বছর। মুশকিল হচ্ছে, যা করার বাঘেদেরই করতে হবে। মানুষের কিছু করার বলতে অরণ্যের সুরক্ষার দায়িত্ব নেওয়া।

শেষ এগারো বছরে সুন্দরবনে বাঘ কমে চার ভাগের এক ভাগ। পনের বছর আগে বাঘ ছিল ৪০০। হরিণ ৩০ হাজার। খিদে পেলে বাঘেরা হরিণ ধরত আর খেত। এখন হরিণরাও হারাচ্ছে। বাঘ খিদে পেলে মৃগয়ায় ব্যর্থ। কী করবে। থাবা চেটে তো পেট ভরে না। নিশ্চিন্তে বাস করার জায়গাই বা কোথায়। পৃথিবীর বৃহত্তম উপকূলবর্তী গরান গাছের অরণ্য সুন্দরবন। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এক তৃতীয়াংশ পানিতে ঢাকা। দুর্বল নদীতে সমুদ্রের পানি ঢুকছে হু হু করে। লবণাক্ত হচ্ছে নদী। বাঘ তৃষ্ণা মেটাবে কী করে। নোনা জলে বাদাবনও কমছে। সুন্দরী, গরান-গেঁয়ো গাছ বাঁচতে না পারায়, তাপমাত্রা বাড়ছে। তাপমাত্রা হেরফেরে মৌসুমী বায়ু নির্দিষ্ট সময়ে আসছে না। সময় মতো বৃষ্টি নামছে না। আবার কখনও, অসময়ের বর্ষণ আর ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত সুন্দরবন। গাছ মরছে। প্রাণ হারাচ্ছে বাঘেরাও। আবহাওয়ার ওলটপালটে ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। জনপদও গিলছে অরণ্য। মানুষই বা যাবে কোথায়। সংখ্যায় বাড়ছে। বাধ্য হয়ে বন কেটে বসত। বাঘেদের জায়গা নিচ্ছে মানুষ।

১৯৬৬ সালে সুন্দরবন হয়েছে অভয়ারণ্য। বাংলাদেশ থেকে যেতে হলে খুলনার বন দফতররের অনুমতি নিতে হয়। প্রথমটা জলপথ। লঞ্চে মঙ্গলা বা ধাংমারি থেকে হিরণ পয়েন্ট। সেখানে নেমে গাইড সঙ্গী করে অভয়ারণ্যে প্রবেশ। এ অরণ্য ইউনেস্কোর ঘোষণায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। সুন্দরবন নদী উপনদী শাখানদীতে ভরা। যার মধ্যে আছে মাতলা, গোসাবা, সপ্তমুখী, হরিভাঙা, পিয়ালি, ঠাকুরানি বা জামিরা, রায়মঙ্গল, কালিন্দী, ইছামতী। সব নদীতে কুমীর, শুশুক যথেষ্ট।

সুন্দরবনের পূর্বে বাগেরহাট, পশ্চিমে সাতক্ষীরা, দক্ষিণে খুলনা। উত্তরে হবিগঞ্জে রেনা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য। সুন্দরবনের মান বাঁচাতে বাংলাদেশ বন দফতর তৎপর। মানুষের কবলে পড়ে বাঘেদের যেন কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য। চোরা শিকারীদের দিকে কঠোর নজরদারি। প্রকৃতিবান্ধব পরিবেশে বাঘের মন ভাল থাকে। প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য বাড়াতে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ কর্মসূচি।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

বিডি-প্রতিদিন/ ৩০ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ-১৫



এই পাতার আরো খবর