ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

টুনটুনি ভাঙতে পারে রানীর রেকর্ড
শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সাভারের ছোট আকৃতির গরু রানীর করা রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে টুনটুনি। দেশি জাতের এ গরুটির বয়স বছর পার হলেও খর্বাকৃতিই (বামন) রয়ে গেছে। টুনটনির সন্ধান পাওয়া গেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখার চালা আড়ালিয়া ভিটা গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত আহাম্মদ আলীর ছেলে কৃষক আবুল কাশেমের পালিত একটি গাভীর গর্ভে কাজলা সাদা রঙের খর্বাকৃতির এ বাছুরের জন্ম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বকনা বাছুরটির জন্ম হয়। বছর ঘুরে গেলেও গরুটির ওজন ও উচ্চতা স্বাভাবিক হারে বাড়েনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মায়ের এ পাশ কাটিয়ে ওপাশে, টুনটুনির দুরন্তপনা চলে হরদম। মা আদর করতে চাইলে দৌড়ে দূরে সরে যায় দুষ্ট টুনটুনি। মা মুখ নাড়তেই ফের মায়ের গা ঘেঁষে দাঁড়ায় সে। এমনি খুনসুটিতে সকাল গড়িয়ে বিকাল পর্যন্ত মায়ের চারপাশে ঘোরাফেরায় মত্ত থাকে এক বছর বয়স বয়সী টুনটুনি। এখন সে বহু মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

পরিবারের দাবি, এটিই হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু। যার ওজন ২১ থেকে ২২ কেজি হবে বলে জানান গরুর মালিক। টুনটুনি পাখির মতো  তিড়িংবিড়িং করে বলে তার নাম রাখা হয়েছে টুনটুনি। 

গরুর মালিক কৃষক আবুল কাশেম জানান, তার ছোট-বড় সাতটি গরু রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি গাভী গরু রয়েছে আর চারটি ষাঁড়। গাভী তিনটির মধ্যে একটি গাভী বেশ বয়স্ক হয়ে পড়েছে। সে গাভীটি আটটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে গাভীটি খুবই ছোট আকারের একটি বাচ্চা প্রসব করে। 

প্রতিবেশী কামাল হোসেন জানান, কয়েক দিন আগে টিভিতে দেখেছি সাভারের রানী নামের ছোট্ট গরুটিকে। এখন তার চেয়ে ছোট্ট গরু বাড়ির পাশেই। আমরা কখনো এমন ছোট গরু দেখিনি। খুবই চঞ্চল ছোট বাছুরটি। দেখতেও দারুণ আনন্দ লাগে। সারা দিন মায়ের পাশে পাশে ঘুরে বেড়ায়। আশা করি, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর স্বীকৃতি পাবে।

কৃষকের স্ত্রী জরিনা বেগম জানান, আমরা কৃষক পরিবার। নিয়মিত আমরা গরু লালন পালন করি। সব সময় আমাদের গোয়ালে ৭/৮ টি গরু থাকে। এ গাভীটির গর্ভে গত বছর টুনটুনি জন্ম নিয়েছে। ও এতো ছোট ছিল যে গাভীর ওলানে মুখ লাগাতে পারতো না। পরে কোনো উপায়ন্তর না দেখে তাড়াতাড়ি করে বোতলে দুধ ভরে খাওয়ানো হতো বাছুরকে। পরে কোলে তুলে উঁচু করে গাভীর ওলানে ধরলে সে নিজে নিজেই দুধ খেতে পারতো। এরই মধ্যে এক বছর বয়স হলো বাছুরটির। কিন্তু গায়ে গতরে বড় হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এখন এ বাছুরকে সন্তানের মতো আদর করি। অন্য রকম আনন্দ লাগে। গ্রামের মানুষ দেখতে আসে ছবি তোলে, দেখতে ভালো লাগে। যদি এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু হয় তাহলে আমাদের গর্ব, আমাদের গ্রামের গর্ব, দেশের গর্ব।

গোসিঙ্গা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (ইউপি সদস্য) আশরাফুজ্জামান বাবু জানান, এটা আমাদের আনন্দের খবর। এ বকনা বাছুরটি যদি বিশ্বের সব চেয়ে ছোট গরু হয় তাহলে গ্রামবাসীর আনন্দ আরও বেড়ে যাবে। আশা করি, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি যাচাই বাছাই করে স্বীকৃতির  পেতে ব্যবস্থা নিবেন।

খর্বাকৃতির গরু টুনটুনির গড় উচ্চতা ২০ থেকে ২২ ইঞ্চি। ওজন ২২ থেকে ২৩ কেজি। লম্বায় ৩২ ইঞ্চি।

শ্রীপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রোকনুজ্জামান পলাশ জানান, এমন খবর আমাদের জানা নেই, শুনলাম। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। আমরা যাচাই বাছাই করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করবো।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, গরুটি জন্মের সময় ওজন কম নিয়ে জন্ম নেয়। কিন্তু দীর্ঘ ১৩-১৪ মাসেও এর বৃদ্ধি হয়নি তেমন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের গবেষকগণ গবেষণা করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হওয়া যাবে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর