ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

লোকসানের কবলে আমন চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক
ফারুক আল শারাহ, লাকসাম:

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে লোকসানের কবলে পড়ে আমন ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। এতে উপজেলার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর অনাবাদী পড়ে থাকছে। বছরের ৬ মাস ফসলি মাঠ পানির নিচে থাকায় মাঠজুড়ে জন্মেছে জলজ আগাছা। ধান গাছ না থাকায় গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠ।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত তিন দশক আগেও বোনা আমন চাষে এখানকার কৃষকদের আগ্রহ ছিল লক্ষ্যনীয়। কৃষকরা মনের আনন্দে কেওড়া, গচ্চা, হিরবাইন, বটেশ্বর, তিলিবাজাল, বালাম, কাতিয়াশাইলসহ নানান প্রজাতির ধান বুনতো। মৌসুম শেষে কৃষক-কৃষাণীর মুখে দেখা দিত হাসির ঝিলিক। কৃষকের আঙ্গিনা ভরপুর থাকতো আমন ধানে। গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের দৃশ্য যে কারো নজর কাড়তো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আমন ধান হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে কৃষকের নেই গোয়াল ভরা গরু। গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের দৃশ্য এখন মোটেও চোখে পড়েনা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুজন কুমার ভৌমিক জানান, চলতি বছর ৩শ’ ৩৪ হেক্টর জমিতে বোনা আমন চাষ হয়েছে যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৪শ’ হেক্টর কম। জলবায়ু পরিবতনের পাশাপাশি আমন ধান চাষ অলাভজনক হওয়ায় কৃষকরা ধীরে ধীরে আগ্রহ হারাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় কৃষককে বোনা আমনের পাশাপাশি পাট চাষ, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার পরামর্শ দেন তিনি।

উপজেলার সালেপুর গ্রামের কৃষক বাবুল জানান, আমন ধানের বীজ বপন থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত হাল, বীজ ও মজুরী খরচ উঠাতেই হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আগাম বর্ষা, ইঁদুরের উপদ্রব সব সামলিয়ে প্রাপ্ত ধানের দ্বিগুনেরও বেশি খরচ হয়। সব শেষে ফসল ঘরে তোলার পর ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হয় কৃষক।

একাধিক কৃষক জানান, ইরি-বোরো মওসুম পরবর্তী সময়ে বর্ষার আগেই বোনা আমন চাষের উপযুক্ত সময়। বর্ষার পানির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠা এ ধান গাছ ভরা বর্ষায় কোমর পানিতেও টিকে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বিকল্প কৃষি ব্যবস্থাপনা না থাকায় এখানকার কৃষকরা বর্ষাকালে অলস সময় কাটায় মাসের পর মাস। এ ধান চাষে কৃষককে দেয়া হয় না ভূর্তুকি অথবা প্রণোদনা। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কর্তৃক সমন্বিত উদ্যোগ ও কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হলে চাষীদের মাঝে ফিরে আসতে পারে বুনো আমনের সেই সোনালী অতীত। আমন আবাদ হতে পারে হাজার হাজার হেক্টর ফসলী জমি। এতে কমে আসবে অনাবাদী জমি।   

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর