ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বেগুনি জলচর পাখি ‘কালিম’
রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর
বেগুনি জলচর পাখি ‘কালিম’।

চকচকে নীলচে বেগুনি জলচর পাখি ‘কালিম’। তবে বিভিন্ন অঞ্চলভেদে এটিকে কালেম, কায়ুম, কালাম, কামিয়া, করমা, সুন্দরী ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশের হাওর, বাওর, খাল, বিল ও নদী পাড়ের জলাশয়গুলোতে এদের দেখতে পাওয়া যায়।

বন্য কালিম পাখি দল বেঁধে থাকতে পছন্দ করে। আবার এই পাখি বাড়িতেও পোষা যায়। ছোট থেকে এদের ছেড়ে লালন-পালন করলে পোষ মেনে যায়। পোষ মানলে কালিম পাখি আর উড়ে যায় না।

দিনাজপুর অঞ্চলে এই পাখি খুব একটা দেখা না গেলেও অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধারকৃত দুটি কালিম পাখি এখন দিনাজপুরের জাতীয় উদ্যান রামসাগরের মিনি চিড়িয়াখানায় বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। দূর-দূরান্তের পর্যটকদের পদভারে মুখরিত ঐতিহাসিক রামসাগরে এই পাখিটি দেখতে ভুলছেন না কেউ।

কালিম পাখি খুব দুঃসাহসী, লড়াকু স্বভাবের। দেখতে চকচকে নীলচে বেগুনি। আলতা রঙের কপাল-মাথা ও পা। কালিম পাখির ঠোঁট ও মাথার ঝুঁটি লালচে কমলা বা লাল বা লালচে বেগুনি হয়ে থাকে। গায়ের পালক নীলচে বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। লেজের তলা কার্পাস তুলার মতো সাদা। চোখের পাশে বৃত্তাকারে সাদাটে ছোপ। এই পাখির পা দুটি লম্বা, পায়ের আঙুলগুলো লম্বা ও চিকন।

বন্য কালিম পাখির খাদ্য তালিকায় রয়েছে-ছোট মাছ, ব্যাঙ, কীট-পতঙ্গ, শামুক, কচি পাতা, ধান, শষ্যদানা, নলডাঙ্গার কচি ডগা, নরম ঘাস ইত্যাদি। গৃহপালিত কালিম পাখিকে ধান ও তার সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয় পোল্ট্রির ছোট দানার ফিড। কচুরিপানা বা অন্য কোনো শাক-পাতাও খায় সে।

কালিম পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Porphyrio porphyrio। এই পাখি Rallidae (রেলিডি) পরিবার গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। কালিম পাখির গড় ওজন ৭৭০ গ্রাম ও দৈর্ঘ্য ৫১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা জলচর প্রাণী হলেও খাদ্যের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তারা এক বিল থেকে অন্য বিলে স্থানান্তরিত হয় না।

প্রতিকূল অবস্থাতেও টিকে থাকা, এই বন্য পাখিটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি। বনে থাকা কালিম পাখি বর্ষাকালে ২ বার ৪-৮টি করে ডিম দেয় এবং নিজেই তাপ দিয়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা লালন-পালন করে। গৃহপালিত কালিম পাখি বছরে ৪-৬ বার ডিম দেয়। প্রতিবার ৮ থেকে ১০টি ডিম দেয়। ২৩ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে। মায়ের সাথে ১০/১৫ দিন ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। তারপর থেকে নিজে নিজেই খাবার খেতে শুরু করে দেয়।

প্রকৃতি থেকে দিনদিন হারিয়ে যাওয়া এই বন্য পাখিকে অনেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শখের বসে পালন করেন। পোষ মানার পর এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় পাখিদের সাথে। যেখানেই থাকুক না কেন ডাক দিলেই উড়ে আসে। আর তাদের ডাকে মন তৃপ্ত হয়। পোষ মানা এই কালিম পখিটির বাজার মূল্য অনেক। ছোট বাচ্চা প্রতি জোড়া ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। একটু বড় বাচ্চার দাম আরও বেশি।

দিনাজপুর বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা ও রামসাগর জাতীয় উদ্যানের তত্বাবধায়ক মো. সাদেকুর রহমান সাদেক  জানান, সুন্দরী এই ‘কালিম’ পাখিটি কিছুদিন আগে একজনের বাড়ি থেকে এনে এখানে রেখেছি। ভালভাবে উড়তে পারে না। পুরোপুরি উড়তে পারলে পাখি দুটিকে অবমুক্ত করে দেওয়া হবে। পাখিটিকে দেখতে এবং এর সম্পর্কে জানতে অনেক দর্শনার্থী ভিড় করছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর