চাঁদপুর জেলায় অতিবৃষ্টিতে ২১৭ হেক্টর জমির রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় শুক্রবারে অতিবর্ষণে অধিকাংশ জমির বীজতলায় পানি জমে গেছে। ভুট্টা, আলু, সরিষা, সয়াবিন ও বিভিন্ন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবছর পরপর দু’দফা বৃষ্টি জেলার কৃষকদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
কৃষকরা জানান, এখানকার মাটি উর্বর হওয়ায় ভুট্টা, আলু, সরিষা, সয়াবিন চাষের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি রবি মৌসুমে চাঁদপুরে ভুট্টা ৪ হাজার ১২০ হেক্টর, আলু ৭ হাজার ১শ’ ৪০ হেক্টর, সরিষা ২ হাজার ১শ’ ১৫ হেক্টর, সয়াবিন ৯শ’ ৪০ হেক্টর, শীতকালীন সবজি ৫ হাজার ৪শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর মাত্র অল্প কয়েক দিন পরেই কৃষকদের সেই কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তোলার কথা। হঠাৎ এই বৃষ্টিতে আমাদের সেই স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেল।
কৃষক হানু মুন্সী ও আনোয়ার হোসেন জানান, তারা ৬০ শতক জমিতে আলু ও সরিষা আবাদ করেছি। ডিসেম্বরে মাঝামাঝি ঘূর্ণিঝড়ে আলু ও সরিষা বীজ পানিতে তলিয়ে যায়। পরে ঋণ করে আবার আলু ও সরিষা বীজ লাগাই। কিন্তু শুক্রবারে অতিবৃষ্টিতে আলুর বীজতলায় পানি ও সরিষা গাছ মাটিতে শুয়ে পড়ে আছে। এতে করে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো কি না দুশ্চিন্তায় আছি। তাতে আমাদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, লাভ-লোকসান যাই হোক আলু আবাদ আমাদের প্রধান ফসল। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারও ৪২ শতক জমিতে আলুর চাষ করেছি। এখনও আলুর পুরোপুরি ফলন হয়নি। হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছি। আমাদের দাবি কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকার যদি প্রণোদনা বা কোন সহায়তা দেয়, তবে আমরা কিছুটা উপকৃত হবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সূত্রে জানায়, চাঁদপুর সদর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভুট্টা ৮ হেক্টর, সরিষা ৩০ হেক্টর, সয়াবিন ১০ হেক্টর ও সবজি ৫ হেক্টর , হাইমচরে ক্ষতিগ্রস্ত সয়াবিন ১০৫ হেক্টর, ফরিদগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত সয়াবিন ১৫ হেক্টর, মতলব (উত্তর) ক্ষতিগ্রস্ত ভুট্টা ৪ হেক্টর, আলু ৮ হেক্টর, সবজি ১২ হেক্টর এবং মতলবে (দক্ষিণ) ২০ হেক্টর জমির আলু ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি অফিসার নরেশ চন্দ্র দাস জানান, অতি বৃষ্টিতে জেলায় বিভিন্ন রবি ফসলের মধ্যে ভুট্টা ১২ হেক্টর, আলু ২৮ হেক্টর, সরিষা ৩০ হেক্টর, সয়াবিন ১৩০ হেক্টর, সবজি ১৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতি বৃষ্টিতে চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে ক্ষতির পরিমাপ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব। সরকার অতীতেও কৃষকদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়েছে। এবারের বৃষ্টিতে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি কোনো সহায়তা পেলে তা কৃষকদের নিকট পৌঁছে দেয়া হবে।