ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নানা স্বাদের কুল
জমির বেগ্, ফেনী

ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নানা স্বাদের কুল। ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নে দিন মজুর আছমত আলী ৪০ শতক জমিতে ও ধর্মপুরে ফরিদ উদ্দিন মাসুদ শখের বসে ৫৫ শতক জমিতে করেছেন কুল চাষ। তাদের জমিতে আপেল কুল, বল সুন্দরী, কাশ্মীরী, বাউকুলসহ নানা জাতের কুল চাষ হচ্ছে। কুল বাগানগুলোতে গিয়ে দেখা যায় নানা রঙের কুলে ভরপুর হয়ে আছে গাছগুলো। কুলের ওজনে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো।

দিন মজুর কৃষক আছমত আলী জানান, মেঘনা নদীর ভাঙনে তার বাড়ি বিলীন হয়ে গেলে তিনি পরিবার নিয়ে কাজিরবাগ ইউনিয়নে ভাড়া বাসায় থাকেন। দীর্ঘদিন রিক্সা ও ভ্যান চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে ঝুঁকেছেন কৃষিতে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের পরামর্শে তিনি কুল চাষে নেমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, গত বছরের মার্চ মাসে পাবনা থেকে বল সুন্দরী, কাশ্মীরী, আপেল কুল ও বাউকুল জাতের ১শত চারা এনে রোপণ করেছেন। বল সুন্দরী ও কাশ্মীরী প্রতি পিস চারা ৮০ টাকা, আপেল কুল প্রতি পিস চারা ১৫ টাকা, বাউকুল প্রতি পিস চারা ১২ টাকা দিয়ে কিনেছেন। প্রতি গাছে ৯ থেকে ১২ কেজি ফলন হয়েছে। প্রতি কেজি ১শ টাকা দরে বাগানেই তিনি বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। এই মৌসুমে বাগান থেকে ১ লাখ টাকার বেশি কুল বিক্রি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ফরিদ উদ্দিন মাসুদ জানান, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ধর্মপুর ইউনিয়নে ৫৫ শতক জায়গা ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ৩ প্রজাতির কুল, ৩৭ প্রজাতির মাল্টা গাছের চারা রোপণ করেন। বল সুন্দরী কুল ৪০০’শ গাছ ও কাশ্মীরি কুল ৫০টি ও বাউ কুলে ৫০টি গাছের চারা রোপণ করেন। ৭ মাসের মাসের মাথায় প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। ১১ মাসের মাথায় এসে কুল বিক্রি করতে শুরু করেছেন। প্রথম বছর কুল চাষে চারা, চার পাশের বেড়া, ওপরের বিশেষ নেট ও জমি তৈরিসহ আনুষাঙ্গিক কাজে সর্বমোট ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছর কুল বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে প্রতি কেজি বল সুন্দরী কুল ৮০ টাকা ও কাশ্মীরি কুল ১০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতারা জমি থেকে কুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামী বছর তার কুল বাগান থেকে দেড় লাখ টাকার কুল বিক্রি হবে বলেও তিনি আশা করছেন। আগামী বছরের শেষ সময়ে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা ফল বিক্রি করা যাবে বলেও তিনি জানান। 

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ফেনীর মাটি ও জলবায়ু কুল চাষাবাদের জন্য খুব বেশ উপযোগী। বিভিন্ন ধরনের জৈব সার তৈরি করে কুল বাগানে ব্যবহার করায় ফলন ভাল হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কুল চাষী কৃষক এক বছরে যে লাভ পাচ্ছে পরের বছরগুলোতে দ্বিগুণ লাভবান হবেন। কারণ প্রথম বছর কিছু স্থায়ী খরচ হয়। যা পরের বছরগুলোতে হবে না। কৃষকের পাশাপাশি দেশও লাভবান হবে। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল-হাসান সম্প্রতি কৃষক আছমত আলীর কুল বাগান পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন এ ধরনের ফল চাষে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি সমৃদ্ধ হবে দেশ। ফেনীর মাটি যে কুল, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনে ফল ও সবজি চাষের উপযোগী এটা প্রচারিত হওয়া উচিত। এতে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে চাষাবাদ শুরু করবেন যাতে তিনি যেমন লাভবান হবেন তেমনি কৃষির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর