ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পুনর্ভবা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের দাবি কৃষকদের
বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর পোরশা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদী এখন মরা খাল হওয়ায় আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা নদীটিতে খরার সময় পানি থাকে না। ফলে প্রতি বছর নাব্যতা হারিয়ে এর প্রবাহ পড়ে শূন্যের কোঠায়। তবে এখন কিছু কিছু জায়গায় ছোট ছোট খালে হাটু পানি দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন পরেই ওই পানির দেখাও মিলবে না। বর্তমানে কৃষকরা এপার থেকে ওপার পায়ে হেঁটে পার হচ্ছেন। 

এখন পুনর্ভবার পাড়ে ও তলায় বের হয়েছে হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি। এসব জমিতে স্থানীয়রা গম, সরিষা আবার কেউ বোরো ধান চাষ করেছেন। নদীটি খনন না করায় বালি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষার সময় অল্প পানিতেই নদীটি ভরে গিয়ে দু’কূল উপচিয়ে যায়। আর ফাল্গুনের প্রথম দিকেই মরা নদীতে পরিণত হয়। 

জেলার বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, এককালে বার মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এলাকার সকল রাস্তাঘাট অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময়ে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকম নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকতো। এমন কি নদীতে বিয়ের বর যাত্রীদের বাহারি নৌকার বহরও চোখে পড়তো। সে সময় এ নদীতে চলত মালবোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। 

অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকাযোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। সে সময় পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়তো। অতীতে এলাকায় কোন গভীর, অগভীর নলকূপ না থাকায় ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকায় এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করতো। বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। 

এই নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসনব্যবস্থা, নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাকযোগে স্বল্পসময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। ফলে নদী পথের প্রয়োজন অনেকটাই যেন ফুরিয়ে গেছে। ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটিও হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ঐতিহ্য। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়। 

বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না এটি একটি প্রবাহমান নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। নদীটির পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ইরি-বোরো মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করে চাষাবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের দাবি নিতপুর পুনর্ভবা নদীতে একটি রাবার ড্যাম বা বাঁধ নির্মাণ করা। নদীতে রাবার ড্যাম বা বাঁধ থাকলে খরা মৌসুমে পানি আটকানো সম্ভব। আর খরা মৌসুমে নদীতে পানি থাকলে কৃষকরা ঐ পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে পারবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর