ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন সবুজের সমারোহ
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। চারিদিকে সবুজের সঙ্গে বাতাসে দোল দিয়ে উঠছে যেন সবুজ ঢেউ। দূর কিম্বা কাছে সব খানেই এখন সবুজময়। এই সবুজই আবার রোদে পুড়ে সোনালী রঙ ধারণ করবে যখন তখন হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে আর গোলায় উঠবে নতুন ধান। আর আবারো ভালো ফলন পাওয়ার আশায় বোরো ধান পরিচর্যায় ব্যস্ত বগুড়ার কৃষকরা। জমিতে নিড়ানী দেয়া, সার ও কীটনাশক প্রদানসহ ধানগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা। বোরো ক্ষেতে মাঝে মাঝে শীষ দেখা যাচ্ছে। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বগুড়া জেলায় প্রতিবছর বোরো ধান চাষের পর ভাল ফলন পাওয়া যায়। এই জেলার চাষিরা বোরো ধান চাষে অভিজ্ঞ। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ি ১৫ জানুয়ারির থেকে বোরোর বীজ জমিতে রোপন শুরু হয়েছে। পুরো দমে চলতি মৌসুমে চাষ হয়েছে। এবছর বগুড়া অঞ্চলে শীত বেশি থাকায় বোরোর বীজ তৈরী হয়েছে ঘনকুয়াশার মধ্যে। বীজতলা তৈরীর পর সময়মত চাষ হয়েছে বগুড়ায়। যে কারনে চলতি বছর ভালো ফলনের আশা করছে চাষিরা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ সহকারী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন জানান, চলতি বছরে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে শেষ পর্যন্ত মোট আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে চাল আকারে উৎপাদন হবে ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিকটন চাল। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ লাখ ৮৮হাজার ৫১০ হেক্টর। আর চাল আকারে উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ১০ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। এবছর প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া যাবে ৫ থেকে ৬ টন করে। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই রেকর্ড পরিমান জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। এবারও ভালো ফলনে ভালো দামের প্রত্যাশায় মাঠে কাজ করছেন চাষীরা। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন হবে বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারও জেলায় বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন বোরো ধানের চারাগুলো বেড়ে উঠেছে, অনেক স্থানেই বোরোর শীষ ফুটতে দেখা গেছে। সার সেচ, কীটনাশক দেয়াসহ জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। ভালো ফলনের প্রত্যাশায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। প্রতি বছরের মত এবারও লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা। তারা প্রতিনিয়ত কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে ভালো ফসল উৎপাদনে সহযোগিতা করছে। জেলার নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, শেরপুর সহ প্রায় সব উপজেলাতেই  বোরো চাষ হয়ে থাকে। বোরো ধান উত্তোলন শেষে জমিতে নতুন ফসল চাষে খরচ কম হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বোরো চাষের জমি।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হুয়াকুয়া গ্রামের বোরো চাষি আবু মুসা জানান, ১০ হাজার টাকা খরচে বিঘাপ্রতি ১৮ থেকে ৩০ মন ধান পাওয়া যায়। জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ধান রোপন শেষে মে মাসে ধান কেটে ঘরে তুলতে হয়।  বগুড়া সদরের রাজাপুরের চাষী রফিকুল ইসলাম, গাবতলী উপজেলার সোহেল রানা, বোরো চাষি শিহাব হোসেন জানান, গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে তারা বোর ধান চাষ করেছেন। প্রতিবছরই ভালো ফলন পাওয়া যায়, এবারো ভালো ফলনের আশা করছে তারা। তারা জানান, গত বছর ধানের দাম ভালো পাওয়া গিয়েছিলো। এবছরও ধানের দাম ভালো পাওয়া গেলে লাভবান হবেন তারা। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন জানান, ধান ও চালের মুল্য ভালো পাওয়ায় কৃষক ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারো বাম্পার ফলন হবে। তাছাড়া বগুড়া কৃষি এলাকা। প্রতি বছরই এই বোরোর বাম্পার ফলন পাওয়া যায়। আশা করা হচ্ছে এবছরও বাম্পার ফলন হবে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। 

বিডি প্রতিদিন/এএ



এই পাতার আরো খবর