ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বারোমাসি আম বাগানে সফলতার স্বপ্ন
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

ফলের বাগান গড়ে সফলতার স্বপ্ন দেখছে মালয়েশিয়া ফেরত যুবক শহিদুল ইসলাম ও মামুনুর রশীদ। তারা দুজনে মিলে বেকারত্ব দূর করে ৪৫ বিঘায় বারোমাসি আম চাষ করে সফলতা পেয়েছে। অসময়ে পাকা আম পাওয়ায় বাজারে চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। বারোমাসি আম চাষ করে হয়েছেন তারা লাখপতি।  

জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলা মাগুরাচাইড় এলাকার মালয়েশিয়া ফেরত শহিদুল ইসলাম ও একই উপজেলার খানপুর ভাটরা গ্রামের স্নাতকোত্তর শেষ করা বেকার যুবক মামুনুর রশীদ। লেখাপড়া শেষ করলেও ভালো চাকুরী পাননি মামুনুর রাশদ আর মালয়েশিয়ায় মন টেকেনি শহিদুল ইসলাম এর। দেশেই শ্রম দিয়ে কিছু গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ফেরেন তিনি। বেকার মামুনুরের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে এই দুই উদ্যামী যুবকের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠে ফুল এগ্রো ফার্ম। দেশের মানুষের নিরাপদ ফল পুষ্টি যোগান দিতে ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ২০০টি বারোমাসি আম গাছের সঙ্গে কুল ও পেয়ারা মিশ্র ফলচাষ শুরু করা হয়। ৪৫ বিঘা জমি বর্গ নিয়ে বরোমাসি আমের বাগান গড়ে তুলেছেন তারা। আম চাষের পর প্রথম বছরে কম সাফলতা আসে। দ্বিতীয় বছরে বেশ সাফল্য আসে। এরপর করোনার কারনে বাজারে ভালো দাম পায়নি। কম দামে বিক্রি করতে হয় আম। আর এবার ভালো দাম পাচ্ছে বারোমাসি আমগুলো। 

বাগান মালিক শহিদুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ জানান, এবার শীত মৌসুমে আমের দাম ভালো হওয়ায় ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে অসময়ের আম বিক্রি করা হয়েছে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকা করে। এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি করা হয়েছে। আশা রয়েছে রমজানে শেষে আরও ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি হবে। তারা জানান, বেশিরভাগ আম বিক্রি হয়ে থাকে অনলাইনে আর স্থানীয় ফল ব্যবসায়িরা আম পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যায়। তারা খোলা বাজারে একটু দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। 

সরেজমিন ফুল এগ্রো ফার্ম বারোমাসি আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার মুকুলের ফাঁকে থোকায় থোকায় দুলছে গাছপাকা আম। সাধারণত জৈষ্ঠ্য মাসে আম পরিপক্বতা পায়। আর মামনুর রশীদ ও শহিদুল ইসলাম এর যৌথ ফুল এগ্রো ফার্মে সারা বছর আম পাওয়া যায়। প্রায় ৪৫ বিঘার আমের বাগান। বাগানের গাছগুলো পাকা ও কাঁচা আমে ভরা। বাগানে ঝুলছে ‘কাটিমন’ আম। এটি থাইল্যান্ডের আমের একটি জাত। কাটিমনের পাশাপাশি তাদের বাগানে ‘বারি-১১’ জাতের আমও আছে। এখনও বাগানের গাছে অন্তত ৫০-৬০ হাজার আম আছে। রমজান মাস ও ঈদে সেগুলো বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রমজান মাসে ইফতারে তালিকায় অসময়ে পাকা আম রাখতে অনলাইনে অর্ডারে পাশাপাশি বাগানে প্রায়দিনই স্থানীয় দর্শনার্থীর ভিড় জমাচ্ছে। 

ইকবাল হোসেন নামের এক আম ক্রেতা জানান, লোকমুখে মাধ্যমে জানতে পারি ফুল এগ্রো বাগানে সারা বছর সুস্বাদু আম পাওয়া যাচ্ছে। তাই ইফতারে খাওয়ার জন্য দুই কেজি পাকা আম কিনেছি। আমগুলো দেখতে সুন্দর। বাগানে বেশিরভাগ গাছেই আম ধরেছে।  উদ্যোক্তা মামুনুর রশীদ আরো জানান, অনেক লোকজন আসছেন তাদের থেকে পরামর্শ ও আমের চারা সংগ্রহ করতে। তিনি চান দেশজুড়ে এ আম ছড়িয়ে পড়ুক। অসময়ে আম ফলিয়ে চাষিরা লাভবান হোক। সঠিক পরামর্শ ও ভালো মানের আমের চারা বিক্রি করা শুরু হয়েছে। দেশের বেকার তরুণ-যুবকরা বিভিন্ন প্রকারের ফলের চাষ করে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে নিজেরাই স্বাবলম্বী হতে পারে।

বগুড়ার হর্টিকালচার সেন্টার বনানী উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুর রহিম জানান, গত কয়েক বছর থেকে সিজনাল আমে দাম কম হওয়ায় কিছু আগ্রহী কৃষকরা বারোমাসি আমচাষে ঝুঁকছেন। হর্টিকালচার সেন্টার প্রদর্শনীয় প্লটের মাধ্যমে বারোমাসি আম চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে। এ জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে বারোমাসি আমবাগান রয়েছে। কৃষকদের ফলজ বৃক্ষ রোপনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। 

বিডি প্রতিদিন/এএ



এই পাতার আরো খবর