ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গরুর খামার গড়ে ভাগ্য ফিরেছে রেবেকার
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া
নিজ খামারে দাঁড়িয়ে রেবেকা বেগম।

বগুড়া সারিয়াকান্দিতে গরুর খামার গড়ে ভাগ্য ফিরেছে রেবেকা বেগমের। খামারের সঙ্গে গোবর থেকে জৈব কম্পোস্ট সার তৈরি করে বিক্রি করছেন সারা দেশে। ৪টি গরু দিয়ে শুরু করে এখন তার খামারে রয়েছে ৭৮টি গরু। নিজের সংসারে বেড়েছে আর্থিক সচ্ছলতা। খামার ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত থেকে অর্ধশত বেকারের সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের।

জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত মহসিন আলীর মেয়ে রেবেকা বেগম। তিনি তার এলাকার আমতলী গ্রামে গড়ে তুলেছেন জি কে এস এস এগ্রো খামার। ২০০৭ সালে অল্প পরিসরে ৪টি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার খামারে বর্তমানে গরুর সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্য দেশি জাতের গাভি রয়েছে ২২টি। এই গাভিগুলো সংকরায়নের মাধ্যমে ব্রামহা জাত করা হয়। খামারে দুধেল বিদেশি গাভি রয়েছে ১৩টি। এই বিদেশি গাভিগুলো প্রতিদিন ১৭০ থেকে ২০০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।

সদ্যজাত ব্রাহমা গরুর বাছুর রয়েছে ৩১টি এবং গর্ভবতী গাভির সংখ্যা ১৫টি। খামারে ১২টি ষাঁড় রয়েছে। খামারটির শেডঘর রয়েছে ৯০ শতাংশ জমি। গরুর ঘাস খাওয়ানোর জন্য ১০ বিঘারও বেশি জমিতে লাগানো হয়েছে ঘাস। এ খামার দেখানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৮৯ জন নারী-পুরুষ শ্রমিক। এদের মধ্যে ৩২ জন নারী ও ১৭ জন পুরুষ মাসিক বেতনে চাকরি করেন। তাদের মাসিক বেতন ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া এই খামারে প্রতিদিন ৫০ জন পর্যন্ত দিন মজুর কাজ করেন দিন হাজিরায়। খামারে উৎপাদিত নানা ধরনের জৈব কম্পোস্ট সার বিক্রয়ের জন্য সারা দেশব্যপী রয়েছে ১ হাজার ডিলার। এসব সারগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইকো কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্ট, সাধারণ কম্পোস্ট, লিকুইড, পাওয়ার এবং জিম্যাক্স জৈব কম্পোস্ট সার। এ খামার থেকে রেবেকা প্রতি মাসে ১৩ থেকে ১৪ লাখ  টাকার সার, দুধ এবং গরু বিক্রি করেন। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় করেন রেবেকা।

রেবেকা বেগম জানান, তিনি স্নাতক পাশের পর থেকেই খামার ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হন। বিদেশি জার্নাল থেকে একটি দেশি গরুর চেয়ে ব্রাহমা জাতের গরুর তিনগুণ বেশি ওজন হয়। ২৪ মাসে একটি দেশি গরুর ওজন যদি ৩০০ কেজি হয়, তাহলে একই সময়ে একটি ব্রাহমা জাতের গরুর ওজন হবে ১ হাজার কেজি। তাছাড়া একটি সাধারণ জাতের গরুর তুলনায় এরা খাবারও খায় অর্ধেক। দেশি গাভিতে বগুড়া মাটিডালি থেকে ব্রাহমা জাতের সিমেন প্রয়োগ করে সংকরায়ন করা হয়। এরপর থেকে তিনি আয়ের পথ দেখেন। খামার থেকে প্রতিদিন দুধ বিক্রি করেন। জৈব সার বিক্রি করেন। প্রয়োজন অনুসারে গরু বিক্রি করেন। আগের থেকে তার সংসারে ভালো আয় বেড়েছে।

খামারের নারী শ্রমিক কোহিনুর বেগম (৪০) জানান, তিনি খামারে সার তৈরির কাজ করেন। এখান হতে প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা বেতন পান। যা দিয়ে গরিব পরিবার সচ্ছলভাবেই চলে বলে দাবি করেন। তিনি জানান, এই সারের স্থানীয়ভাবে ছাড়াও বাইরের জেলাতেও চাহিদা রয়েছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহ আলম বলেন, রেবেকা বেগম খামার করে নিজে ব্যাপকভাবে সফল হয়েছেন এবং এলাকার অনেক বেকারের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছন। তার খামার ছাড়াও সারিয়াকান্দিতে আরও তিনটি বড় খামার রয়েছে। এগুলো হলো, নারচী দেবেরপাড়ার আরিফুর রহমানের গরুর খামার, কুতুবপুর রায়হান ডেইরি ফার্ম এবং ফুলবাড়ী সবুজ ডেইরি ফার্ম। এছাড়া উপজেলায় ৮০টি মাঝারি এবং ১ হাজারের কাছাকাছি ছোট গরুর খামার রয়েছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, আমাদের এ উপজেলার মাটিতে জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে। ভাল ফসল উৎপাদনের জন্য যেখানে মাটিতে ৫% জৈব সারের প্রয়োজন, সেখানে সারিয়াকান্দিতে রয়েছে ২%। এক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যের রেবেকা বেগমের উৎপাদিত জৈব সার অনেকটা ঘাটতি মিটাতে সক্ষম হচ্ছে। তার সারের চাহিদা দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই  



এই পাতার আরো খবর