ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জে বছরব্যাপী চাষ হচ্ছে বারি পেঁয়াজ-৫
সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ:

বারি পেঁয়াজ-৫ এখন সারা বছরই চাষ হচ্ছে কিশোরগঞ্জে। এর আগে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পেঁয়াজ গ্রীষ্ম ও খরিপ মৌসুমে আবাদের জন্য অবমুক্ত করে।

প্রথমবারের মত কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার রামপুর গ্রামে এ পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেয় কিশোরগঞ্জ কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র। রামপুর গ্রামের ছয়জন কৃষকের তিন বিঘা জমিতে এ পেঁয়াজ চাষ হয়। কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র সূত্র জানায়, প্রতি বিঘায় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। আর উৎপাদন হয় বিঘাপ্রতি ২৫০০ কেজি।

কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ সেচ, পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে দোআঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। সাধারণত চারা তৈরি করে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ করা হয়। বীজ বপণের সময় অত্যধিক রোদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিন বা চাটাই ব্যবহার করা এবং অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বীজতলা থেকে ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। সফলভাবে পেঁয়াজ চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি প্রয়োজনীয় জৈব ও অজৈব সার ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত হেক্টর প্রতি ৫ টন গোবর, ১৫০ কেজি ইউরিয়া, ১৭৫ কেজি এমওপি, ২০০ কেজি টিএসপি, ১০০ কেজি জিপসাম ও ১২ কেজি জিংক সালফেট ব্যবহার করা হয়। 

ব্যবহার নিয়মানুযায়ী জমির শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও আগাম চাষের জন্য দুই তৃতীয়াংশ ইউরিয়া মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া পার্শ্বপ্রয়োগ করতে হবে। মাটিতে প্রয়োজনীয় রস না থাকলে সারের পার্শ্বপ্রয়োগের পরই সেচ দিতে হবে। 

পেঁয়াজের চারা রোপণের পর একটি প্লাবণ সেচ অবশ্যই দিতে হবে। মাটিতে চটা বাঁধলে কন্দের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। সেজন্য  মাটির 'জো' আসার সাথে সাথে চটা ভেঙ্গে দিতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। নিড়ানীর সাথে সাথে ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া ঢেকে দিতে হবে।

পেঁয়াজের গাছ পরিপক্ক হলে এর গলার দিকের টিস্যু নরম হয়ে যায়। চারা থেকে কন্দের পরিপক্কতা হওয়া পর্যন্ত আগাম চাষের ক্ষেত্রে ৬০-৭০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে ৯৫-১১০ দিন দরকার হয়। শীতল ও ছায়াময় স্থানে ৮-১০ দিন রেখে কিউরিং করতে হবে। বর্ষাকালীন সময়ে উত্তোলনকৃত পেঁয়াজ এক মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না। তবে এমন ভাবে শুকাতে হবে যাতে কন্দে সরাসরি রোদ না লাগে। এরপর বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা, ঘরের সিলিং, প্লাস্টিক বা ঘরের পাকা মেঝেতে শুষ্ক ও বায়ু চলাচলযুক্ত স্থানে পেঁয়াজ কিছুদিন সংরক্ষণ করা যায়।

কিশোরগঞ্জ কৃষি গবেষণা উপকেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জানান, মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বপন করা যায়। তবে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা উৎপাদন করা উত্তম। অতঃপর ৪০-৪৫ দিনের চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। 

তিনি আরও জানান, নাবি চাষের ক্ষেতে জুলাই থেকে আগস্ট মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হবে। পরবর্তীতে ৪০-৪৫ দিনের চাড়া মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। আগাম চাষে ৬০-৭০ দিন এবং নাবি চাষের ক্ষেত্রে ৯৫-১১০ দিন সময় লাগে। হেক্টর প্রতি ১৮-২০ টন ফলন পাওয়া যায়। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর