ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বোরো ধানে একর প্রতি কৃষকের লোকসান ২০ হাজার টাকা!
নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

এক একর (১০০ শতাংশ) নিজের জমিতে বোরো আবাদে কমপক্ষে ৫ হাজার ও বর্গা বা মেদি জমিতে ২০ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। এতে তারা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ধানের উৎপাদন কম, শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের মজুরি বেশি এবং ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ চলতি বোরো আবাদে ২২ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৭৫১ হেক্টর। আর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। ইতোমধ্যে সারা উপজেলা জুড়ে পুরোদমে ধানকাটা শুরু হয়েছে। এ বছর ফলন কম ও শ্রমিকের মজুরি বেশী হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা। এক একর জমিতে আগে যেখানে ৮০-১২০ মণ ধান হতো এবার তা ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মণ ধান হচ্ছে। বর্তমানে এক মণ ধানের দাম ৫৫০-৭৫০ টাকা। সে হিসেবে এক একর জমির ৬০ মণ ধান ৭৫০ টাকা বিক্রি করলে ৪৫ হাজার টাকা। খরচের হিসেব করলে দেখা যায়  নিজের জমি হলে এক একর জমি প্রস্তত করতে  ৪ হাজার টাকা, বীজ ও বীজতলা ৪ হাজার টাকা, ধানের চারা রোপন ৬ হাজার টাকা, সার ও কীটনাষক ৬ হাজার টাকা, সেচ দেওয়া ৫ হাজার টাকা, জমি নিরানী ২ হাজার টাকা, ধান কাটতে ১২-২০ হাজার টাকা, মাড়াই করতে ২ হাজার টাকা, এরপর ধান বাজারে বিক্রি ২ হাজার টাকা। এখানে কমপক্ষে কৃষকের ৫ হাজার টাকা লোকসান। আর যদি জমি বর্গা বা মেদি নেওয়া হয় তাহলে আরো ১৫ হাজার টাকা যোগ হয়।

শিমুল তলা গ্রামের মো.জুয়েল মিয়া (৪৮) বলেন, আমি ১৮ (৯০ শতাংশ) কাঠা জমি ১৬ হাজার টাকায় মেদি নিয়ে বোরো আবাদ করে ২০ হাজার টাকা লোকসানে আছি। 

তারাকান্দি গ্রামের কৃষক আবুল বাশার (৫৫) বলেন, 'কামলার দাম বেশি থাকায় এক একর ক্ষেতের ধান কাটতে পারছিনা। রাতে ঘুম অয়না, কখন ঝড়-তোফান অয়, শিলা বৃষ্টি অয়। পুলাপান (ছেলে-মেয়ে) নিয়া নিজে নিজেই কিছু কাটতাছি। জমি করতে আমগরে অনেক কষ্ট হয়। আমগর সারা বছরের পরিশ্রমের একমাত্র সম্বল এই ধান। কিন্তু ধানের দাম যদি ঠিক না থাকে তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচমু। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমরা যেন ধানের ন্যায্য দাম পাই।'

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আলমগীর কবীর বলেন, কৃষি অফিস শ্রমিক সংকট শোনার পর ২২ টি হার্ভেষ্টার মেশিন দ্রুততার সাথে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়। এখন সেই শ্রমিক সংকট নেই। আর কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ না করে পুরনো জাতের ধান আবাদ করা এবং পোকার আক্রমণে ফলন কম হয়েছে। আর ধানের মূল্য বাড়ছে। যে সমস্ত কৃষক জমি বর্গা বা মেদি নিয়ে আবাদ করেছেন তারা কিছুটা লোকসানের মধ্যে থাকবে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর