ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বরিশালের তৃণমূলে বিক্রিত ১১ ধরনের সার ভেজাল
ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফসল ও মাটির স্বাস্থ্য
রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রিত সারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। এ অঞ্চলে বিক্রিত ১১ ধরনের সারে ভেজালের প্রমাণ পেয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভেজাল সার প্রয়োগে কৃষি ফসল এবং মাটির স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে বিক্রিত সারে অতিরিক্ত মাত্রায় ভেজাল পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত ডিলার বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না দাবি বরিশাল জেলা প্রশাসকের। 

বরিশাল বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মামুন বলেন, বাজারে বিক্রিত জিংক সালফেট মনো, জিংক সালফেট হেপ্টা ও মিশ্র সারের নমুনা পরীক্ষায় ৮৭ ভাগ থেকে শতভাগ ভেজাল রয়েছে। এতে মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। 

ইন্সটিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী আমিনুল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে সারে ভেজালের পরিমাণ বেড়েছে। গত দুই বছরে প্রাপ্ত ৬৬৩টি সারের নমুনা পরীক্ষায় ১৩৭ টির মধ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। বাজারে বিক্রিত সারের ২১ ভাগ ভেজাল। 

বিভাগীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম আমিনুল ইসলাম আকন জানান, বরিশাল অঞ্চলে কৃষকের মাঠে ব্যবহৃত ১১ পদের সারের মধ্যে টিএসপি, ডিএপি, জিংক, বোরিক এসিড, সলুবর, জিপসাম, মিশ্র ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট জাতীয় সারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। এসব ভেজাল সার ব্যবহারে কৃষি ফসল ফলন ও মাটির স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। 

সারে ভেজাল পাওয়ার পরও আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকারের কোনো সংস্থা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত্ব বলেন, বরিশাল বিভাগে ৩৬২ জন সার ডিলার ও ২ হাজার ৫০৫ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছে। কোথাও সারে ভেজাল পাওয়া গেলে ওইসব সার জব্দ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বাজার থেকে তাদের সার প্রত্যাহার করতে বলা হয়। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের গবেষনা রিপোর্ট সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ অবগত নয় বলে তিনি জানান। 

এদিকে ভোক্তা পর্যায়ে ভেজাল সার বিক্রির বিষয়ে কোন তথ্য নেই বরিশাল জেলা প্রশাসনের কাছে। 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, বরিশালের বাজারে ভেজাল সার বিক্রির কোন তথ্য আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেনি। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। 

কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, বরিশাল বিভাগের ৮ লাখ ১৭ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমিতে প্রয়োগের জন্য প্রতি বছর ৩ লাখ ৬৮ হাজার ২০৪ মেট্রিক টন সার ব্যবহার হয়ে থাকে। সে হিসেবে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন ভেজাল সার বিক্রি হচ্ছে বরিশাল অঞ্চলে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর