ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলন
মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ বছরও সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ২৭ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কর্মকর্তারা।   জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪১ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার চাষ করা হয়েছে। গত বছর চাষ করা হয়েছিল ১৩৮ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ৩ হেক্টর জমিতে বেশী চাষ করা হয়েছে।   খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর সদর উপজেলায় ১ হেক্টর, সরাইল উপজেলায় ২ হেক্টর, কসবা উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, নবীনগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর, বাঞ্চারামপুর উপজেলায় ৫ হেক্টর, নাসিরনগর উপজেলায় ২ হেক্টর, আখাউড়া উপজেলায় ১৫ হেক্টর, আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ হেক্টর ও বিজয়নগর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে।    ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৯০০টি মাল্টার বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগরে ৭৫৪টি, কসবায় ৬৬০টি ও আখাউড়ায় ৪৬৬টি মাল্টার বাগান রয়েছে।  বাকীগুলো অন্যান্য উপজেলায়।   কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মোট ১৪১ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৪৫৩ মেট্টিক টন মাল্টা উৎপাদন হবে। উৎপাদিত মাল্টা প্রায় ২৭ কোটি টাকা বিক্রি করা হবে।   জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাষ শুরু হয় ২০১৫ সালে। বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল, নোয়াবাদী ও মেরশানী, আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমোদাবাদ ও রাজাপুর এলাকার মাল্টার বাগানগুলোতে এখন থোকায় থোকায় মাল্টার সমারোহ। বাগানগুলোতে গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ডালে ডালে ঝুলছে সবুজ মাল্টা। গাছে গাছে সবুজ মাল্টা পথচারীদের নজর কাড়ছে। মাল্টার বাম্পার ফলনে চাষীরাও খুশী। ইতিমধ্যেই মাল্টা পরিপক্ক হওয়ায় বিক্রিও শুরু হয়েছে। ক্রেতাদের কাছেও রয়েছে গুনে মানে পুষ্টি সমৃদ্ধ এই মাল্টার চাহিদা। এতে করে বাগান মালিকেরা ভাল দাম পাচ্ছেন।    কৃষি অফিস সূত্র ও চাষীরা জানান, ২০১৫ সালে কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় প্রথমবারের মতো চাষীরা বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টার চাষ শুরু করে। প্রথমদিকে অপরিচিত এই ফলটির চাষাবাদ নিয়ে স্থানীয় চাষীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও উৎপাদন খরচ কম এবং মাল্টার ফলন ভালো হওয়ায় পরবর্তীতে চাষীরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে।   বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের চাষী মো. শিমুল মিয়া বলেন, তিনি কয়েক বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন। পরে সেখান থেকে দেশে ফিরে মাল্টার বাগান করেন। গত বছরও মাল্টা চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছিলেন। এ বছরও তিনি লাভবান হবেন বলে প্রত্যাশা করছেন।   একই এলাকার বাগান মালিক মো. সাচ্চু মিয়া বলেন, আমরা যারা এই এলাকায় মাল্টা বাগান করেছি, আমরা সবাই লাভবান হয়েছি। ২০১৫ সালে মাল্টা চাষ শুরু করি। গাছ লাগানোর ২/৩ বছর পরই মাল্টা বিক্রি করতে পারছি।    উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের চাষী সোহাগ ভূঁইয়া জানান, তিনি ৬০ শতাংশ জায়গায় মাল্টার বাগান করেছেন। ৫ বছর আগে ৬০টি মাল্টা চারা দিয়ে বাগান শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে ১৬০টি মাল্টা গাছ। তিনি বলেন, সব গুলো গাছে পরিপূর্ণভাবে ফলন ধরেছে।    উপজেলার সিঙ্গারবিল গ্রামের মাল্টা চাষী আবদুল আলিম বলেন, তার বাগানে ১৩০টি মাল্টা গাছ আছে। বাগানের পরিচর্যা করতে তার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করি দেড় লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব।   বাগান মালিক সাজু ভূঁইয়া বলেন, বিজয়নগরের পাহাড়ি এলাকার মাটি লাল হওয়ায় মাল্টা চাষের জন্যে বেশ উপযোগী।    তিনি বলেন, মাল্টার ফলন এবারও ভালো হয়েছে, বিক্রিও বেশ ভাল হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও কুমিল্লা, নরসিংদী ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে বাগান থেকে সরাসরি মাল্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।    বিজয়নগর উপজেলা  উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. রুহুল আমীন খান বলেন, মাল্টা বিদেশি ফল হলেও এটি এখন আমাদের দেশীয় ফলের সাথে সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বিজয়নগর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সাইট্রাস ভিলেজ প্রজেক্টের আওতায় কৃষকদেরকে বিনামূল্যে মাল্টার চারাসহ কৃষি উপকরণ দেয়া হয়। যার বিপ্লব ঘটেছে মাল্টা চাষে।    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, মাল্টা লাভজনক ফসল হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকরা ক্রমেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। চলতি বছর জেলায় ১৪১ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ করা হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় ২৭ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।   বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন


এই পাতার আরো খবর