ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বনসাই তৈরি সময়ের চাহিদা
বকুল হাসান খান
ফাইল ছবি

বনসাই শখের ও আয়ের উপায় হতে পারে। আসুন আমরা বনসাইয়ের পদ্ধতি জেনে নেই

চারা তৈরি

সাধারণত বনসাইয়ের চারা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বীজ সংগ্রহ করেও চারা তৈরি করে নিতে পারেন। যেসব প্রজাতির বীজ পাওয়া যায় না, সেসব উদ্ভিদের অঙ্গজ পদ্ধতি অবলম্বন করে চারা তৈরি করতে হয়। বীজ সংগ্রহ করেও চারা তৈরি করে নিতে পারেন। অর্থাৎ কাটিং, ঝড় বিভাজন, তেউড় বিভাজন, দাবাকলম, গুটিকলম, চোখ কলম প্রভৃতি পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে চারা তৈরি করে নিতে হয়। টব বাছাই ক্যাসকেটড বা উঁচু বনসাই ছাড়া সবরকম বনসাইয়ের জন্য ছোট বাটির টব উত্তম। টবের আকার হওয়া উচিত গাছের শাখা-প্রশাখাসহ তার বিস্তারের চেয়ে কিছুটা ছোট। আকৃতি দৃষ্টিনন্দন হওয়া চাই। টবের আকৃতি সবসময় বৃত্তাকার হতে হবে এমন নয়, আয়তাকার, বর্গাকার কিংবা ত্রিভুজাকারও হতে পারে।

টবে সারমাটি প্রয়োগ

বনসাই টবের জন্য মাটি তৈরি করা খুব সহজ। প্রধানত দোঁআশ মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশিয়ে বনসাইয়ের মাটি তৈরি করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

দোঁআশ মাটি

দোঁআশ মাটি পরিমাণ মতো, কম্পোস্ট ১/২ কেজি, হাড়গুড়ো ৫০ গ্রাম, খড়িমাটি গুড়ো ৫০ গ্রাম, ইটগুড়ো ১৩০ গ্রাম, কাঠের ছাই ৭৫ গ্রাম।

চারা লাগানো

কাটিং গুটি কলম বা বীজের চারা বনসাইয়ে সারমাটি ভরে যথারীতি লাগাতে হবে। টবে পানি নিষ্কাশনের ছিদ্রের ওপর ইটের কুচির পরিবর্তে এক টুকরো তারের জালি রেখে, তা কিছু কাঁকর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর যথারীতি সারমাটি ভরে চারা লাগাতে হবে। 

বনসাই তৈরির ধাপ

বনসাই তৈরির জন্য কাণ্ড, শেকড়, শাখা-প্রশাখা ও পাতার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়। টবের ছোট গাছে প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা বয়োবৃদ্ধ গাছের সুঠাম ভঙ্গিমায় আনার চেষ্ট করতে হবে।

ধাপসমূহ:

কুড়িভাঙা

চারাকে অতিমাত্রায় বোটে করে রাখতে ও ঝোপালো করতে কুড়ি বা পত্রমুকুল ভেঙে দিতে হয়। ক্ষুদে বনসাইয়ের বেলায় তা করতে হয়। কারণ, সবসময় বাড়ন্ত ডগা মাত্র দুটি পাতা রেখে কেটে দিতে হবে। কুড়িভাঙার প্রধান উদ্দেশ্য হলো নিচের পাতার মুকুলকে বাড়তে বাধ্য করা। কারণ সেগুলো বাড়লে গাছের শাখার সংখ্যা বেড়ে গাছ ঝোপালো হবে।

শাখা বাছাই

বনসাইকে যে মডেলের রূপ দেয়া হবে তা স্থির করে শাখা বাছাই করা দরকার। জোড়া পাতার কক্ষ থেকে কাণ্ডের দু’পাশে দুটি শাখা গজায়। বাছাই পদ্ধতি অনুসারে এর একটিকে রাখতে হবে। নিচেরটি ডানদিকে রাখলে তার ওপরেরটি বাম দিকে রাখতে হবে। আসলে বনসাইয়ের কাণ্ডের রূপ যাতে সামনের দিকে কোনো শাখা থাকবে না। থাকবে কেবল ডান ও বাম দিকে এবং পেছনে কাণ্ডের মাথার দিকেও সর্ব দিকেই শাখা থাকতে হবে।

শাখা ছাঁটাই

প্রায়শই বনসাইয়ের বয়স ৩-৪ বছর হলে তখন কাটার প্রয়োজন হয়। বাছাই করা মোটা শাখাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে হয়। এর জন্য যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা উচিত, তার নাম কনকেভ কাটিং প্লায়ারস। এর কাটার ধরন পৃথক। কাটার স্থানের চারদিকে থেকে ছাল বেড়ে তাড়াতাড়ি তা ঢেকে দেয়।

তার বাঁধা

কাণ্ড বা শাখাকে সুন্দর সুঠাম ভঙ্গিমায় আনতে যেসব কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা হয়, তার বাঁধা তাদের মধ্যে অন্যতম। সরল শাখায় তার জড়িয়ে আঁকাবাঁকা রূপ দেওয়া যায়। কাণ্ডের জন্য মোটা তার ও শাখার জন্য সরু তার প্রয়োজন। সাধারণত এজন্য তামার তার ব্যবহার করা হয়। অনেকে গ্যালভানাইজিংয়ের তারও ব্যবহার করেন। মনে রাখা দরকার, তার জড়ানোর ফলে গাছ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তার খোলার পর গাছকে ছায়ায় বা হালকা ছায়ায় অন্তত সপ্তাহ খানেক রাখা দরকার। প্রয়োজনবোধে দুই-তিনবার তার জড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তা অন্তত ছয় মাস অন্তর হওয়া দরকার। বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত প্রজাতির গাছ বট, হিজল, অশ্বথ, ডুমুর, ডালিম, কদম, বাগানবিলাস, বোতল ব্রাশ, নিম, জামরুল ও তেঁতুল ইত্যাদি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

 



এই পাতার আরো খবর