ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পঞ্চগড়ে ছড়িয়ে পড়ছে লাম্পি স্কিন রোগ, মারা যাচ্ছে শত শত গরু
পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ে সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে গবাদি পশু গরুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অনেক গরু। দ্রুত গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে রোগটি। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারি এবং কৃষকরা। চিন্তায় নিদ্রাহীন তারা। গত এক মাসে কয়েকশ গরু মারা গেছে জেলার সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে। মৃত্যুর হার বেশি তেঁতুলিয়া উপজেলায়। লাম্পি স্কিন রোগের পরিধি বেপরোয়া গতিতে বাড়লেও প্রাণী সম্পদ অফিসের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। প্রতিশোধক নেই, জনবল নেই, নেই আধুনিক কোন সুযোগ সুবিধা- এমন মনগড়া অজুহাত দিয়েই খালাশ তারা। 

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে মাস খানেক আগে দেখা দেয় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। মুহূর্তেই তা পুরো ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে। এই ইউনিয়নটির ২৪ টি গ্রামে এখন পর্যন্ত প্রায় দু'শ গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে । পার্শ্ববর্তী বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে ৬৫ টি গরুর মৃত্যু হয়েছে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে। রোগটি এখন ইউনিয়ন ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলায়। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও বেড়েছে এই রোগের প্রকোপ। শুরুতে সারা শরীরে বসন্তের মতো গুটি গুটি উঠছে। তারপর পায়ের হাটু গোড়ালি ও গলা ফুলে যাচ্ছে। গলায় জমছে পানি। জ্বর ও প্রচন্ড ব্যথায় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয় আক্রান্ত গরুগুলো। অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কেউ কেউ আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা রাখছেন। কিন্তু তারপরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। ২ বছরের কম বয়সের গরু আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। অনেক কৃষক কিস্তির মাধ্যমে এনজিওগুলো থেকে ঋণ নিয়ে এসব গরু কিনে লালন পালন করছিলেন। এসব কৃষকের অবস্থা আরও খারাপ।

খামারি ও কৃষকদের অভিযোগ প্রাণী সম্পদ অফিসের চিকিৎসকদের ডাকলে বড় অংকের ফি দিতে হয়। তা ছাড়া তারা সাড়া দেন না। নিরুপায় হয়ে তারা গ্রামের পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। গরু প্রতি খরচ হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। লাম্পি স্কিন ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও প্রাণী সম্পদ অফিসসহ সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো নজরদারি নেই। মহামারি ঠেকাতে কৃষক ও খামারিরা এলাকাভিত্তিক জরুরী চিকিৎসা ক্যাম্প চালুর দাবি তুলেছেন।

বড় দলুয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার দুইলাখ টাকা মূল্যের গরু এই রোগে আক্রান্ত মারা গেছে। হাজারো চেষ্টা করে অফিসের কোনো লোক পাইনি। প্রাণী সম্পদ অফিসের ডাক্তারদের কল করলে তারা ১ হাজার টাকা ভিজিটের কমে আসে না। আমরা সরকারি কোনো ওষুধও পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে গ্রামের পশু ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। কিন্ত তারপরও কাজ হচ্ছে না। গরু প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। 

তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, তেঁতুলিয়ায় লাম্পি নিয়ন্ত্রণে আছে। নতুন করে কোনো আক্রান্ত নেই। খামারিদের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা দিন রাত কাজ করছে। এখন যেগুলো আছে সেগুলো পূর্বে আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের লোকবল কম।

পঞ্চগড় জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুর রহিম জানান, এখন শীতকাল এই রোগ কমে আসবে। মহামারি আকার এখনো ধারন করেনি। আমাদের কোনো কর্মচারি বা ডাক্তার টাকা পয়সা নেয় না। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর