ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সোনালি রঙের শীষ ডাক দিয়েছে আমন ধান কাটার
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া
চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছে আমন ধান ঘরে তুলতে

রোদে পুড়ে সবুজ শীষ হয়েছে সোনালি। বাতাসে দোল খেয়ে জমির ক্ষেতে ঝনঝন শব্দ করে বেজে উঠছে পাকা ধানের শীষ। মুখরিত সেই সব শব্দের মাঝেই সোনালি রঙের শীষ ডাক দিয়েছে পাকা আমন ধান কাটার। ফসলের নতুন গন্ধ মেখে চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে আমন ধান ঘরে তুলতে।

পল্লী কবি জসীমউদ্দীন লিখেছেন, আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান/সারামাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি কোটার গান/ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়/ কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায়। এভাবেই কার্তিকের রূপের কথা বলেছেন তার অমর সৃষ্টি কাব্যকাহিনী নকশী কাঁথার মাঠে। কবির সেই ধান পাকার গন্ধ নিয়েই বগুড়ায় কৃষি শ্রমিক আর আমন চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বগুড়া জেলা শহরের শাখারিয়া, সাবগ্রাম, নন্দীগ্রাম সড়ক, কাহালু সড়ক, শিবগঞ্জ সড়কসহ বেশ কিছু এলাকায় ধান কাটা চলছে। শ্রমিকরা দল বেঁধে ধানকেটে মাড়ায় করছে। বগুড়া শহরের চারমাথা, তিনমাথা, মাটিডালি, মহাস্থান এবং রেলওয়ে স্টেশনে ধান কাটার শ্রমিকদের দেখা গেছে। তারা উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে বগুড়ায় আসছে ধান কাটতে। ধানকাটার শ্রমিকরা পালা করে কাজ করে বগুড়া অঞ্চলের ধানকাটা মাড়ায় শুরু করেছে। বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন আমন ধান কাটার ব্যস্ততা বেড়েছে চাষিদের। বেশিরভাগ কৃষকের বাড়িতে এখন নতুন আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। কোথাও চলছে ধান কাটার কাজ, আবার কোথাও চলছে ধান মাড়ায় আবার শুকানোর কাজ। এসব মিলিয়ে আমন চাষিদের উঠানে এখন কর্মব্যস্ততা।

জানা যায়, বগুড়া জেলায় সারের সংকট না থাকায় চাষিরা পুরোদমে আমন চাষ করে। জেলায় সময়মতো সার পাওয়ায় আমনের চাষিরা বাম্পার ফলন পাওয়ার আশায় মাঠে মাঠে শ্রম দিয়ে যায়। কৃষি অফিস বলছে, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন চাল আকারে ফলন পাওয়া যাবে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। এর মধ্যে এবার জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মাঠে মাঠে চাষিরা আমন চাষের পর নিড়ানী ও আগাছা পরিষ্কার করে সার দিয়ে এখন ধানে পাক ধরায় কাটতে শুরু করেছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন জানান, সারের কোনো সংকট ছিল না। চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে নিয়মিতভাবে সার মাসের শুরুতেই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সারের সংকট না থাকায় সময়মতো চাষিরা আমন চাষ করেছে। এখন আমন ধান বাটা শুরু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটছে চাষিরা। উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসতে শুরু করেছে। পুরোদমে ধানকাটা শুরু হলে শ্রমিকও আরো বেশি লাগবে। বগুড়ায় এবার আমনের ধানের ফলন ভালো হয়েছে।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আমন চাষি মো. আমিনুর রহমান জানান, সারের কোনো সমস্যা ছিল না। সময়মতো আমন চাষের পর ধান পেকেছে। এখন ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত বছর ধানের দাম কম ছিল। এবছর ধানের দাম বাড়লে চাষিদের খরচও উঠবে।

বগুড়া সদর উপজেলার আমন চাষি মো. মামুন জানান, জমিতে আমন ধানের পাক ধরায় শ্রমিক লাগিয়ে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে এবার শ্রমিকের মূল্য বেশি। এক বিঘা ধান কাটতে শ্রমিকের পেছনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধান চাষি নাহিদ হাসান জানান, বগুড়ার বিভিন্ন হাটে আমন নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের শুকনা ও চিকন ধান ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা মণ। আর কাঁচা ও মোটা হলে ধানের মণের দাম হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ। বাজারে অল্প কিছু ধান উঠেছে। এই ধানই কেনাবেচা শুরু হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর