ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কৃষক সেন্টুর উদ্ভাবিত নতুন দুই ধানে আলোড়ন
নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের চাটকিয়া গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত কৃষক সেন্টু চন্দ্র হাজং। ৪৫ বছরের সেন্টুর পড়াশোনা উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোয়নি। তাতে কি, স্থানীয় মানুষের কাছে এই সেন্টু হাজং যে ‘ধান গবেষক’ হিসেবে পরিচিত। ১৬ বছরের চেষ্টায় বিলুপ্ত প্রায় দেশি ধানের জাত ব্রিডিং ও শঙ্করায়ন করে তিনি ২৩ ধরনের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। এ বছর সেন্টু পাইজাম ও আতপ বীজ ধান নিয়ে কৃষকরা আবাদ করে ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষক সেন্টু হাজং বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশি জাতের বিলুপ্তপ্রায় বগি, হালই, গোলাপি, মালঞ্চি, ময়নাগিড়ি, মালসিরা, অনামিয়া, পারিজাত, আপচি, কাইশাবিন্নি, মারাক্কাবিন্নি, শংবিন্নি, দুধবিন্নি, বিরই, চাপাল, খাসিয়াবিন্নি, পুরা বিন্নিসহ বেশ কয়েক ধরনের আমন জাতের ধান ৪০০ প্লট করে বীজ সংরক্ষন করে যাত্রা শুরু করেন। এরপর তিনি বীজ ধান নিজের জমিতে ছোট ছোট ছোট প্লট করে ব্রিডিং ও শঙ্করায়ন পদ্ধতিতে নিজ হাতেই আবিষ্কার করছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৩টি নতুন জাতের দেশি আমনজাতের ধান আবিষ্কার করছেন। একটি নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করতে তার সময় লাগে প্রায় ৭ বছর। সবগুলো ধানের নাম রেখেছেন তাঁর নামে। এ বছর তাঁর আবিষ্কৃত আতপ সেন্টু শাইল ও সেন্টু পাইজাম নালিতাবাড়ী উপজেলায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ বছর সেন্টু ২৩ (আতপ) ধান নতুন করে আরো চিকন ও ছোট ধান উদ্ভাবন করেছেন। আগামীতে উৎপাদনের জন্য কৃষকরা বীজ নিচ্ছেন। 

সরেজমিনে সেন্টুর বাড়ীতে দেখা যায় দুটি ভাঙা টিনের ঘর। একটি ঘরে তিনি বসবাস করেন। অন্য ঘরটি গোয়াল হিসেবে ব্যাবহার করেন। সেই গোয়াল ঘরে একটি ড্রামের ভিতর ছোট ছোট আঁটি বেঁধে ধান সংরক্ষণ করেন। সেখান থেকে বাছাই করে নিজের জমিতে ছোট ছোট ৩৭০ টি প্লট করে এ বছর বীজ বপন করে রেখেছেন। আগামী বছর আমন আবাদের জন্য তিনি এই নতুন জাত বাজারজাত করবেন। তিনি বলেন, দেশি জাতের ধানে এমনিতেই পোকার আক্রমণ কম হয়। জৈবসার ব্যবহারের ফলে ধানের উৎপাদন খরচও কম পড়ে। নিজে কৃষক হওয়ার সুবাদে এই কাজে তিনি বেশ আনন্দ ও তৃপ্তিপান। তিনি চান স্থানীয় কৃষিতে তার সামান্য অবদান রাখতে। তার স্ত্রী, শ্বাশুড়ি ও এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে বসবাস। সন্তানরা লেখাপড়া করছেন। তবে তার গবেষণার কাজে সবসময় সহায়তা করেন স্ত্রী অবলা রাণী হাজং।

উপজেলার চাঁদগাও গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি এ বছর আমার ৫ একর ১৫ শতাংশ জমিতে সেন্টুর আবিষ্কার করা আতপ সেন্টুশাইল জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। শুকিয়ে একর প্রতি ৫০-৫৫ মণ হারে ফলন পেয়েছি। প্রতি একর খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সেন্টু শাইলের বর্তমান বাজার দর ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা প্রতিমণ। 

একই এলাকার অপর কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমি এবার ৩ একর ১০ শতাংশ জমিতে সেন্টু পাইজাম ধান লাগিয়েছিলাম। শুকিয়ে ৪০-৪৫ মণ হারে ফলন পেয়েছি। এই জাতের ধানের বর্তমান বাজার দর ১৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা প্রতিমণ। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিবছর সেন্টু শাইল ও সেন্টু পাইজাম ধান আমি আবাদ করি। 

আরতদার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বাজারে বর্তমানে সেন্টু পাইজাম ও ইন্ডিয়ান পাইজাম ধান ব্যাপকহারে আসায় আমরা সে ধানই কিনছি। তবে সেন্টু পাইজাম ধানের চাহিদা বেশী। আর সেন্টু আতপ এখন শেষের দিকে। আতপ ধান আমরা ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকায় কিনেছিলাম।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন, কৃষক সেন্টু হাজং নিজ উদ্যোগে দেশি জাতের ধান উদ্ভাবন করে নালিতাবাড়ীতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয় ভাবে কৃষিতে অবদানের জন্য কৃষি উদ্ভাবক হিসেবে তিনি যেন পুরস্কৃত হন তার নাম কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল 



এই পাতার আরো খবর