ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চাকরি ছেড়ে কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল নাঈম
রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর
চাকরি ছেড়ে কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সফল নাঈম

শ্রম অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত বেতন না পাওয়ায় প্রকৌশলীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজ বাড়িতেই কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন। উৎপাদিত সার নিজের কৃষিকাজে ব্যবহারের পর অতিরিক্ত সার বিক্রি করে প্রতিমাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করছেন। আবার কেঁচো বিক্রি করেও মাসে অতিরিক্ত ৮-১০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতিমাসে কেঁচো সার ও কেঁচো বিক্রি করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা আয় করে সবার অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের তেঁতুলিয়া ইউপির বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের মো. ফজলুর রহমানের ছেলে নাঈম হুদা।

নাঈম হুদা ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক শেষ করেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক শেষ করে নাঈম হুদা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উত্তরা ইপিজেডে চাকরি শুরু করেন। চাকরি করাকালে অনুধাবন করেন চাকরিতে যে সময় আর শ্রম দিতে হচ্ছে, সে অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন না। সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করবেন। ২০১৯ সালে চাকরি ছেড়ে বাড়ির কৃষিতে মনোযোগ দেন। বাড়িতে কমলা, মাল্টা ও মিশ্র ফলের বাগান করেন। বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। বাগান করতে গিয়ে দেখেন ফলবাগানে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি জৈব সারের প্রয়োজন হচ্ছে। তখন কৃষি অফিসের পরামর্শক্রমে দুই শতক জমিতে কেঁচো সারের একটা প্রজেক্ট করেন। আর এতেই তার ভাগ্য ফিরে যায়। শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন।

এ ব্যাপারে নাঈম হুদা বলেন, কেঁচো খামারে ভালো মুনাফা আসায় আমি এই সার ও কেঁচো নিয়ে গবেষণা শুরু করি। তখন হাউস ও রিং থেকে ট্রেতে এই সার উৎপাদন শুরু করলাম। এখন পরীক্ষামূলক বস্তার মধ্যেও শুরু করেছি কেঁচো সার উৎপাদন। ফলও ভালো পাচ্ছি। এখন ৬ শতক জমিতে কেঁচো সারের খামার সম্প্রসারণ করেছেন। এই খামার থেকে প্রতিমাসে ৪-৫ টন কেঁচো সার উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিটন সার ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। আর এ সার খুচরা প্রতিকেজি ১৬-১৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাকে দেখে অনেক বেকার যুবক তার কাছ থেকে কেঁচো নিয়ে বাড়িতে ক্ষুদ্র পরিসরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন।

বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক শাকিল ইসলাম বলেন, নাঈম আমাদের গ্রামের ছেলে। তার নিকট থেকে জৈব সার নিয়ে কলা বাগান, লালশাক ক্ষেতে দেওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। এ জৈব সার ব্যবহার করায় রাসায়নিক সারে যে খরচ হতো তার থেকে খরচ অনেক কম হয়েছে।

তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, নাঈমের সবজি ক্ষেতে জৈব সার ব্যবহারে সবজিরও ফলন ভালো এবং খরচও কম হয়েছে। তার কাছ থেকে সার কিনে সবজি ক্ষেতে দিয়েছি। সবজি ক্ষেতের অবস্থাও ভালো।

এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, উপজেলায় এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রকল্প চালু করেছি। তবে নাঈম হুদা উদ্যোক্তা হিসেবে অত্যন্ত ভালো করছেন। তিনি ইতিমধ্যে সার ও কেঁচো বিক্রি করে নিজের ভালো অবস্থা তৈরি করেছেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর