ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দুই ফসলি জমিতে উৎপাদন হচ্ছে তিন ফসল
আউশ আমনের মাঝে সরিষায় হাসি
প্রতি বিঘায় অতিরিক্ত মিলছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা
রুকনুজ্জামান অঞ্জন, মানিকগঞ্জ থেকে ফিরে
ফাইল ছবি

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের দিকে যেতে জেলা সদরের আগে ডান দিকে মোড় নেয় গাড়ি। গ্রামের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার এগোনোর পর চোখ আটকে গেল ফসলের মাঠে। চার দিকে শুধু হলুদ আর হলুদ। মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের মাতামাতি। ফুলে ফুলে উড়ছে মধু সংগ্রাহক মৌমাছি।

গ্রামের নাম ধুল্যা। সাটুরিয়া উপজেলার একটি কৃষিসমৃদ্ধ এলাকা। এখানে বেশিরভাগ জমিতে দুটি ফসল হয়। যে জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়, সেখানে ধানের আবাদ হয় একটি। আবার কোনো কোনো জমিতে শাকসবজি না করে শুধু ধানের দুটি আবাদ হয়। কোনো জমিতে কেবলই হয় শাকসবজি। দুই ফসলের মাঝে বাকি সময়টা পতিত থাকে খেত। শূন্য মাঠে শিশুরা ঘুড়ি ওড়ায়। খাবার খুঁজে বেড়ায় শালিক-ঘুঘু। সেই বিরাণ মাঠ এবার আর পতিত নেই। হলুদ সরিষায় পরিপূর্ণ। বাতাসে দোল খাওয়া ফুলগুলো যেন হাসছে। মাঠভরা বাড়তি ফসলের দোল খাওয়ার আনন্দে, সেই হাসি ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকের চোখে মুখে।

ধুল্যা গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক জানান, আমন চাষের পর পরবর্তী আবাদের আগ পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ দিন তাদের জমিগুলো খালি পড়ে থাকত। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এ বছর তিনি ওই ফাঁকা সময়ে তিন বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করছেন। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছেন, প্রতি বিঘা জমির সরিষা বিক্রি করে, খরচ বাদ দিয়ে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পাবেন তিনি।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু মো, এনায়েত উল্লাহ বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত ব্রি-৪৯ ধান চাষ করতেন। এই ফসল তুলতে যে সময় লাগে তাতে মধ্যবর্তী আবাদের সুযোগ থাকে না। এ কারণে আমরা কৃষকদের স্বল্পসময়ে চাষ করা যায় এমন উন্নত ধানের বীজ ‘ব্রি-৮৯’, ব্রি-৭৫ ও হাইব্রিড-৭ জাত বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি। এর ফলে এখন মাঝের সময়টাতে সরিষা আবাদ করা যাচ্ছে। উপ-পরিচালক আরও জানান, মানিকগঞ্জে ২০২১-২২ মৌসুমে ৩৭ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। এ মৌসুমে ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে চাষ হয়েছে ৪৬ হাজার ৯১২ লাখ হেক্টর জমিতে, যা গত মৌসুমের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি।  

শুধু মানিকগঞ্জ নয়, সারা দেশেই এখন আর পতিত জমি থাকছে না। ধানের পর বাড়তি আবাদ হিসেবে কোথাও সরিষা, কোথাও তিল, কোথাও বা ডালজাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সারা দেশে ‘তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২০ সালে গ্রহণ করেছে সরকার, যা শেষ হবে ২০২৫ সালে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ বিঘা জমিতে সরিষা, ৭০ হাজার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী, ২৬ হাজার বিঘা জমিতে চিনাবাদাম এবং ২৪ হাজার বিঘা জমিতে সয়াবিন চাষের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় এ ধরনের তেল জাতীয় ফসল আবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

‘তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকারের এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে তারা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। স্বল্প সময়ে উন্নত জাতের সরিষা উৎপাদনের জন্য তারা কৃষকদের মাঝে বীজ, সারসহ বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করছেন। এর ফলে কৃষকরা উৎসাহী হচ্ছেন। অপরদিকে দুই ফসলি জমিগুলোতে এখন তিন জাতের ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের আওতায় আগামী তিন বছরে আবাদি জমির পরিমাণ ৬ দশমিক ১০ লাখ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে সরিষার আবাদ ৮ দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৬ দশমিক ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। 

বর্তমানে খাদ্যের তেল আমদানিতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়ে অন্তত ৪০ শতাংশ আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব। তেল বাবদ যে আমদানি খরচ হ্রাস পাবে, তার পুরোটা যাবে চাষির হাতে। জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। ফসলের মাঠে দোল খাওয়া সরিষার হাসি এভাবেই ছড়িয়ে যাবে কৃষকের মুখে।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর