ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নিজ গ্রামে মুরগি পালনে সফল রিফাত
রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

সংসারের সচ্ছলতা ও স্বাবলম্বীর আশায় বিদেশে গিয়েও সুবিধা করতে না পারায় প্রবাস জীবন থেকে ফিরে এসে নিজ এলাকায় মুরগি পালন করেই বাজিমাত করেছেন সফল উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান ওরফে রিফাত। স্বল্প পুঁজি দিয়ে নিজের শ্রম ও নিষ্ঠাকে কাজে লাগিয়ে আজ বড় খামার গড়ে তুলে সবার অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন তিনি।

প্রবাসী জীবনে স্বাবলম্বী হতে না পারলেও নিজ গ্রামে মুরগি পালনেই স্বাবলম্বী হলেন তিনি। মাত্র ২ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করে এখন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করেন। এরপরেও স্থানীয়ভাবে ১৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে তার খামারে। পরোক্ষভাবে রয়েছে আরও কয়েকজন। এখন তার দুর্দিন কেটে সুদিন ফিরেছে। 

দৃঢ় মনোবল আর শ্রম ও নিষ্ঠায় সফল উদ্যোক্তা হয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল গ্রামের মনিরুজ্জামান ওরফে রিফাত। তাকে অনুসরণ করে স্থানীয় অনেক বেকার যুবক বেকারত্ব দূরীকরণসহ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে মুরগি পালনকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। স্বল্প পুঁজিতে উন্নত জাতের মুরগি পালন করে তরুণ-যুবকদের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

ওই খামারের কর্মচারী পিন্টু ও সুজন ইসলাম বলেন, মুরগি দেখাশোনার পাশাপাশি আমি মুরগির খাবার দেয়া ও কখন ভিটামিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে, সে সব কাজ করি। খামারের মুরগির ডিম ও বাচ্চার হিসাব দেখভাল করি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন খামারগুলোতে একদিনের মুরগির বাচ্চা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকি।

মনিরুজ্জামান ওরফে রিফাত জানান, আমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছি। এরপর উন্নত জীবনযাপনের জন্য ২০০৫ সালে আবুধাবি পাড়ি জমাই এবং সেখানে কাজ শুরু করি। কিন্তু দীর্ঘদিন কাজ করেও নিজের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করতে পারিনি। তখন সিদ্ধান্ত নেই দেশে গিয়ে কিছু একটা করব। পরে গত ২০০৯ সালে দেশে ফিরে আসি এবং চরম অর্থ সংকটে পড়ি। হতাশায় ভুগতে থাকি। এরপর ইউটিউব ভিডিওতে দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নত জাতের মুরগির খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হই। মাত্র ২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করি। উন্নত জাতের সোনালী হাইব্রিড মুরগির ২০টি ডিম নরসিংদী থেকে সংগ্রহ করি। শুরু হয় মুরগি পালন।

এরপর ঢাকার মিরপুর থেকে আরো ২০০ মুরগি কিনে এনে প্রবাস বন্ধু পোল্ট্রি অ্যান্ড চিকস নামে খামার গড়ে তুলি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমার ফার্মে ৪টি সেডে ১৫-১৬ হাজার মুরগি রয়েছে। এখানে প্যারেন্টস মুরগি আছে ৭৫০০ এবং রানিং ডিম আছে ২ হাজার। সেখান থেকে প্রতিদিন ৭০ শতাংশ ডিম সংগ্রহ করা হয়। ডিম থেকে প্রতিমাসে ২৮-৩০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। বাচ্চাগুলো দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার খামারের নিজস্ব পরিবহনে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে প্রতিটি বাচ্চা ২৬-৩৫ টাকা দরে বিক্রয় করা হয়।

তিনি জানান, প্রবাসে থাকাকালীন প্রতিমাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হতো। এখন আমার খামারে ১৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য খরচ দিয়েও আমার প্রতিমাসে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হয়।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর