ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

৬ দেশে যাচ্ছে বগুড়ার আলু
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ায় চাষকৃত আলু যাচ্ছে বিশ্বের ছয়টি দেশে। ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং জাপানে বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি করা হচ্ছে এসব আলু। রপ্তানিকারকরা বলছেন, ছয়টি দেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি করা হচ্ছে। বগুড়া থেকে হাজার হাজার টন আলু বিদেশের বাজারে রপ্তানি হওয়ার কারণে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

বগুড়া কৃষি স্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কৃষি প্রধান এলাকা বগুড়া। বগুড়ায় ধান, আলু, পাট, সরিষাসহ সকল প্রকার সবজির ভালো ফলন হয়ে থাকে। এরমধ্যে বগুড়ায় উৎপাদিত ভালোমানের আলু সারাদেশেই চাহিদা রয়েছে। আলুর পরে সবজির চাহিদাও প্রচুর। বগুড়ায় যে পরিমান আলু উৎপাদন হয় তা স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশের বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। চলতি বছর বগুড়ায় ৫৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। এর বিপরীতে আলুর ফলন ধরা হয়েছে ১২ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। বগুড়া সদর উপজেলা, শাজাহানপুর, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, শেরপুর, ধুনট, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি উপজেলায় অধিক পরিমানে আলু চাষ হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমান আলু চাষ হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলার এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলু চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ উপজেলা থেকে আলু দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সবকিছু মিলে আলুর দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন স্থানীয় চাষিরা। দেশের আলু সহজে বিদেশে রপ্তানি করতে পেরে খুশি আড়ৎদার ও রপ্তানিকারকরা। বিগত পাঁচ বছর ধরে দেশের আলু বিদেশে রপ্তানি করছেন ৫ থেকে ৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৮ হাজার ৫'শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার অতিরিক্ত জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উফশী জাতের আলুর মধ্যে মিউজিকা, ডায়মন্ড, গ্র্যানুলা, অ্যাসটিক, কার্ডিনাল, রোজেটা, ক্যারেজ। নতুনজাত ১২ থেকে ১৩ আর লাল পাকড়ী জাতের আলুর মধ্যে রয়েছে তেলপাকড়ি, পাহাড়ি পাকড়ি, বটপাকড়ি ও ফাটাপাকড়ি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার চাহিদা বেশি থাকায় রপ্তানিকারকরা মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকের কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আলু ক্রয় শুরু করেছেন। মাঠ থেকেই বিক্রি করতে পেরে খুশি স্থানীয় চাষিরা। খেতে আলু উত্তোলনে নেমে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বাজারে আলুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় উত্তোলন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। 

শিবগঞ্জ উপজেলার ভাগকোলা গ্রামের চাষি মোত্তালিব হোসেন, রহুল আমিন জানান, গত বছরে খরচের পরিমাণ বেশি। এবার আলু চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি আলু পেয়েছি প্রায় ৯০ মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। প্রতি মৌসুমে যদি এমন দাম হয় তাহলে আগামীতে আলুর চাষ আরো বাড়বে।

আলু চাষী খালিদ মিয়া জানান, আমার জমির সব আলু মালয়েশিয়ার ফার্মাস এগ্রো লিমিটেডের লোকজনদের কাছে ৫২০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। লাভও হয়েছে। আমার খেতের আলু বিদেশে যাচ্ছে বলে আমি গর্বিত।

আলু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মাসওয়া এগ্রো কোম্পানি বগুড়ার প্রতিনিধি ও শিবগঞ্জের মেসার্স সাগর ট্রেডাসের সাগর হোসেন জানান, তারা তালিকাভুক্ত চাষিদের কাছে থেকে ভালোমানের আলু ক্রয় করেন। বাংলাদেশের আলুর মান ভালো। সহজেই বিদেশে বিক্রি করা যায়। গত বছর ৭৫ টন আলুর চাহিদা ছিল। এবার ১০০ টনেরও বেশি আলু পাঠাতে হবে শুধু মালয়েশিয়াতেই। অন্য দেশ তো আছেই। প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে আলু ক্রয় করা হয় বলে তিনি জানান। 

শিবগঞ্জ উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিতোশ চন্দ্র রায় জানান, এ উপজেলার মাটি খুব উর্বর আবহাওয়া অনুকূলে এবং এলাকায় কোন বন্যা হয় না। যার কারণে যে কোন ফসল চাষ করলে খুব ভালো ফলন দেয়। প্রতি বছরই এ অঞ্চলের চাষীরা শীতের সবজি সহ আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। তবে এবার টানা বর্ষা না হওয়াই বীজতলা সুরক্ষিত রয়েছে। যার জন্য এবার এই উপজেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্রে জানা যায়, গত অর্থ বছরে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশসহ ৩০টি দেশে ৭৮ হাজার টন আলু, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজি ১ লাখ ৬ হাজার ২৬২ টন রপ্তানি হয়েছে। 

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক জানান, বগুড়ায় চাষকৃত আলু রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যসহ কযেকটি দেশে। কিছু রপ্তানিকারক বগুড়া থেকে আলু কিনে চট্টগ্রামের পোর্ট হয়ে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। বগুড়ার আলু রোগবালাই থাকে না। ভালোমানের আলু বলে বিদেশের বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করেছে। বগুড়া থেক বিদেশে বেশ কয়েক বছর ধরে আলু রপ্তানি হয়ে আসছে। এতে কৃষক আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর