ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বিলুপ্ত প্রায় মদনটাক পাখি উদ্ধার
দিনাজপুর প্রতিনিধি

বিলুপ্তপ্রায় একটি মদনটাক পাখিকে অসুস্থ অবস্থায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জে উদ্ধার করা হয়েছে। পাখিটি চিকিৎসা শেষে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

শুক্রবার সকাল ১১টায় বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে দিনাজপুর বন বিভাগের কর্মকতাদের নিকট উদ্ধারকৃত পাখিটি হস্তান্তর করা হয়। পাখিটিকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানের নিরাপদ হেফাজতে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের লাইভস্টক প্রোভাইডার মোঃ মনতাজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে বীরগঞ্জের শতগ্রাম ইউপির প্রসাদ পাড়া গ্রামের চৌরাস্তা সংলগ্ন এলাকায় বাঁশবাগানে একটি বড় পাখি এসে পড়ে। পাখিটি খুব দুর্বল হওয়ার কারণে উড়তে পারছে না এবং এলাকার লোকজন ধরার জন্য চেষ্টা করছে এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পাখিটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে আনা হয়। পরে পাখিটিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে শুক্রবার সকালে দিনাজপুর বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওসমান গনি জানান, লোকালয়ে পাখিটির অবস্থানের সংবাদ পেয়ে দ্রুত উদ্ধার করে আনা হয়। উদ্ধারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি। তবে এখনও কিছুটা দুর্বল থাকলেও অব্যাহত চিকিৎসা সেবায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। পাখিটির ওজন বর্তমান ২কেজি ৮০০ গ্রাম। পাখিটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যেন আবার প্রকৃতিতে ফিরে যেতে পারে সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র, ঔষধ এবং খাদ্য তালিকাসহ বন বিভাগ কর্মকর্তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। প্রতিটি বন্যপ্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমরা আশা করবো লোকালয়ে আসা বন্যপ্রাণীদের ক্ষতি সাধন না করে তাদের উদ্ধারে প্রতিটি মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।

পাখি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওসমান গনি, উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ শামিমা বেগম, বীরগঞ্জ সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিরঞ্জন রায়, সামাজক বন বিভাগের মালী মোঃ আব্দুর রহমান এবং স্থানীয় গণ্যমাধ্যমকর্মীবৃন্দ।

বীরগঞ্জ সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিরঞ্জন রায় জানান, উদ্ধাকৃত পাখিটি মদন টাক। এটি সাধারণত বাংলাদেশে বিলুপ্তির পথে। দেশের আনাচে-কানাচে কিছু পাখি দেখা গেলেও বড় বড় গাছ না থাকায় এবং মানুষের অস্বাভাবিক আচরণে তারা খাদ্য অহরণ ও বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে খাদ্যের খোঁজে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলে। খাদ্যের খোঁজে ছুটতে ছুটতে এক সময় দুর্বল হয়ে লোকালয়ে এসে পড়ে। এসময় দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ তাদের আহত করে। এমনি সংবাদে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর পাখিটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। শুক্রবার সকাল ১১টায় পাখিটি হস্তান্তরের পর দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল-আল-মামুন এর নির্দেশনায় পাখিটিকে রামসাগর জাতীয় উদ্যানের নিরাপদ হেফাজতে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

দিনাজপুর অঞ্চলে মদনটাক পাখি এখন আর দেখা যায় না। এদের অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির পথে। এটি জলচর পাখি হিসেবেও পরিচিত। প্রাপ্তবয়স্ক মদনটাকের পিঠ উজ্জ্বল কালো। শরীর সাদা বর্ণের। ডানার গোড়ায় কালো রং থাকে। পালকহীন মুখের চামড়া ও ঘাড় লালচে। গলা হলদে বা লালচে। চোখ সাদা কিংবা ধূসর। পা লম্বা। পায়ের পাতা, নখর ও পা সবুজে ধূসর থেকে কালো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড়ে বিক্ষিপ্ত ঘন পালক থাকে। মদনটাক পানির ধারে, ঘাসযুক্ত এলাকা অথবা নরম কাদায় খাবার খুঁজে খায়। প্রধান খাদ্য মাছ। এছাড়া ব্যাঙ, সরীসৃপ, কাঁকড়া ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী খায়। এরা কদাচিৎ গলিত পঁচা মাংসও খেয়ে থাকে। কখনো একাকী, কখনো জোড়ায় জোড়ায় আবার কখনো দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে উঁচু গাছের মগডালে ডালপালা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। স্ত্রী জাতীয় মদনটাক তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২৮ থেকে ৩০দিন পরই ডিম থেকে বাচ্চা হয়। 

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর