ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও ক্ষতির মুখে চাষিরা
জুন্নু রায়হান, ভোলা
ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত তরমুজ ক্ষেত।

ভোলায় চলতি মৌসুমে তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে তরমুজ চাষিরা ব্যাপক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন সেখানে দুই তিন দিনের ভারি বৃষ্টিতে সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। লাভ পওয়া দূরের কথা এখন চালানও উঠবে না বলে হতাশায় দিন কাটছে তাদের। 

এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে চলতি মৌসুমে ভোলা জেলায় তরমুজের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। তবে যারা দেরিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন তারা বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতিগস্ত হয়েছেন। 

স্থানীয়রা জানান, তরমুজের জন্য দ্বীপজেলা ভোলার বেশ সুনাম রয়েছে দীর্ঘদিনের। এখানকার চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ চাষ হয়। ফলনও হয় আশানুরূপ। বিগত বছরগুলোর মত এ বছরও তরমুজের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। মৌসুমের শুরুতে আগাম যাদের ফসল উঠেছে তাদের লাভ হয়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু যাদের ফসল উঠতে আরও ১০/১৫ দিন সময় লাগবে তাদের মাথায় হাত। তিন দিনের বৃষ্টিতে তাদের ক্ষেতে পানি জমে গাছ মরে যাচ্ছে। তরমুজ কাটার উপযুক্ত না হতেই গাছ মরে যাওয়ায় লোকসনের মুখে পড়েছেন চাষিরা।

ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয় ইউনিয়নের তরমুজ চাষি আলাউদ্দিন জানান, তিনি ৬ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে তিনি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু বৃষ্টিতে তার ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। সম্পূর্ণ তরমুজ কাঁচা। কিন্তু গাছ মরে যাচ্ছে। অপর এক চাষি আবুল কালাম জানান, তিনি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে একলাখ বিশ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন মাত্র। অপর এক চাষি জানান, বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা কাঁচা পাকা সব তরমুজ বাজারে তুলেছেন। এতে দাম পড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ৮/১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি হত ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। এখন ওই তরমুজ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। 

সরজমিনে দেখা যায়, জমিতে জমে থাকা পানি সরানোর চেষ্টা করছেন চাষিরা। ফসল যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঔষধও দিচ্ছেন কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কোথাও গাছ মরে যাচ্ছে। কোথাও তরমুজ ফেটে যাচ্ছে।  কিংবা পচে যাচ্ছে তরমুজ। এদিকে ধার দেনা করে কিংবা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ  নিয়ে যারা তরমুজ চাষ করেছেন তাদের দুশ্চিন্তা বেশি। কীভাবে ঋণ শোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত তরমুজ ক্ষেতেই দেখা মিলে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহর সাথে। তিনি জানান, ভোলায় সাধারণত পৌষের শুরুতে তরমুজের বীজ বুনতে হয়। ওই সময় জমিতে ধান থাকায় অনেকে ১৫/২০ দিন পর তরমুজের বীজ লাগিয়েছিলেন। যারা পরে বীজ লাগিয়েছিলেন তাদের তরমুজ কাটার উপযুক্ত না হতেই বৃষ্টির পানি জমে সব নষ্ট হয়ে  গেছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এফ.এম. শাহাবুদ্দিন জানান, অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যেই তরমুজ আবাদ করার জন্য কৃষকদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের ধান উঠতে কিংবা জমি শুকাতে বেশি সময় লেগে যায়। তাই কোন কোন চাষি পৌষের মাঝামাঝি সময়েও তরমুজ চাষ করেছেন। আর তারাই বৃষ্টির কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে চাষিরা যদি ব্রি-৭৬, ব্রি-৯৫ অর্থাৎ যে ধানগুলো আগাম চলে আসে তরজুমজের জমিতে সেগুলো চাষ করলে অগ্রহায়নের মধ্যেই তরমুজ আবাদ করতে পারবে।  

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ভোলা সদর উপজেলায় ৩৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। ৪৫০  হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর