ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামে পটল চাষে কৃষকরা পাচ্ছেন না কৃষি বিভাগের সহায়তা
খন্দকার একরামুল হক সম্রাট, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর বুকে পটলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও মিলছে আশানুরূপ। কিন্তু রোগবালাইয়ের আশংকায় কীটনাশক ব্যবহার করলেও সরকারি কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় হতাশ কৃষক। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, যে কোন ধরণের পরামর্শ দিতে প্রস্তুত তার লোকজন। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ নওয়াবশ গ্রামজুড়ে ধরলা নদীর বুকে প্রায় ৬০ একর জমিকে পটল চাষ করেছে প্রায় শতাধিক কৃষক। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি আর খরার কারণে পটলের পাতা লালবর্ণ হয়ে পচে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও আশংকায় থাকা কৃষক কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির কারণে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এ বছর চড়া সুদে ঋণ করে পটল চাষ করে পোকার আক্রমণে লোকসানের আশংকায় রয়েছে তারা।

খামারবাড়ীর দেয়া তথ্যে চলতি খরিপ মৌসুমে ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর সবজির মধ্যে ৩৯০ হেক্টর জমিতে পটলের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। শীত মৌসুম চলে যাওয়ার পর বাকি মৌসুম জুড়ে পটল বিক্রি করতে পারবে চাষিরা। বাজারে চাহদাও প্রচুর। এখন রমজান মাস উপলক্ষে নতুন পটলের চাহিদা আকাশচুম্বি। মাঠে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দাম পরলেও খুচরা বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্চে পটল। পটলচাষী জুবায়েদ ও লিটন জানান, বৃষ্টি ও খরার কারণে পটল ক্ষেত লালবর্ণ ধারণ করছে। শুকিয়ে যাচ্ছে পাতা ও ডগা। এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে কেউ দেখতে আসেনি। কোন খবরও নেয়নি।

পটলচাষি আমজাদ জানান, রমজান মাসের এই সময়ে বাজারে নতুন পটলের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। গতকাল ২ হাজার টাকা মনে পাইকাররা নিয়ে গেছে। আজ একটু দাম পরেছে। ১ হাজার ৮শ টাকা দাম বলছে। এখনো দরাদরি চলছে। উত্তর নওয়াবশ গ্রামের মফিজল হকের ছেলে আল আমিন জানান, গতবার এক একর জমিতে পটল আবাদ করেছি। ক্ষেত তৈরি করতেই প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার জাংলা খরচ লাগছে না ফলে অর্ধেক খরচে পটল লাগানো হয়েছে। এখন পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ করছি। আশা করছি ভালো দাম পাবো। পাশেই পটল ক্ষেতে রাজধান দানাদার বিষ প্রয়োগ করছিলেন চাষি মজনু মিয়া।

জানালেন, কুড়িগ্রাম জেলায় একসাথে সবচেয়ে বেশি পটল চাষ হয় এই জায়গায়। এখানে অনেক কোম্পানির লোকজন আসে। বিভিন্ন কথাবার্তা বলে। কিন্তু সরকারি লোকজন তেমন একটা আসে না। এবার এখন পর্যন্ত কৃষি বিভাগ থেকে কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জমির ভালোমন্দ দেখাশুনা করি। পোকামাকড় রোগবালাই দমনের চেষ্টা করি। কিন্তু সরকারি লোকেরও তো দায়িত্ব চাষিদের ভালোমন্দ দেখা! কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বললেন দক্ষিণ নওয়াবশের পটলচাষী মজনু মিয়া। ক্ষোভ উগড়ে দিলেন পটলচাষি বায়েজিদ।

তিনি জানালেন, দিন দিন কৃষি বিভাগের লোকজন ধান্দবাজীতে নেমেছে। তারা প্রকৃত কৃষককে কিছু দিতে চায় না। যেসব কৃষক তাদেরকে খুশি করতে পারে তাদেরকেই তারা সহযোগিতা করে। দেখেন এখানে পটল ক্ষেতে সমস্যা দেখা দিয়েছে কিন্তু তারা কোন খোঁজখবর নিচ্ছে না। এগুলা এখন সরকারের দেখা উচিত। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, চরাঞ্চলে পটলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগবালাইয়ের বিষয়ে তিনি নিজেসহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারি কৃষি অফিসাররা খবর পেলেই ছুটে যাবে বলে জানালেন তিনি। যাতে উৎপাদনে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।

বিডি প্রতিদিন/এএ



এই পাতার আরো খবর