ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের আবাদ বেড়েছে
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের আবাদ গোপালগঞ্জে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বঙ্গবন্ধু ধান -১০০ অবমুক্ত করে। 

গত বছর গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ২০০ হেক্টর জমিতে এই ধানের আবাদ করা হয়। নতুন এই জাতের ধানের আবাদ করে কৃষক হেক্টর প্রতি সাড়ে ৭ টন ফলন পান। এরপর এই বছর গোপালগঞ্জে ৪৬৫ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের আবাদ হয়েছে। এই বছর বঙ্গবন্ধু -১০০ ধানের আবাদ ২৬৫ হেক্টরে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আ. কাদের সরদার বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ । একটি উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের ধান। এই ধানে রোগ বালাই নেই। ধানের ফলন বেশ ভাল। এই ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হন। তাই প্রতি বছর গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, গত মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের আবাদ করা হয়। গত বছর এই ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হন। তাই চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের আবাদ হয়েছে । এরমধ্যে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৬ হেক্টর , মুকসুদপুরে ৩৫ হেক্টর, কাশিয়ানীতে ১৮ হেক্টর, কোটালীপাড়ায় ১৯০ হেক্টর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১৯৬ হেক্টরে আবাদ করা হয়েছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের পোলটানা গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের নমুনা ফসল কর্তন ও পরিমাপ করেছে।  

কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ কাটা শুরু হয়েছে। আমরা নমুনা ফসল কর্তণ করে দেখেছি প্রতি হেক্টরে এই ধানের ফলন হয়েছে সাড়ে ৭ টন। জিংক সমৃদ্ধ এই ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে আগামীতে কৃষক এই জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

কোটালীপাড়া উপজেলার দীঘলিয়া গ্রামের কৃষক দিলীপ বিশ্বাস (৬৫) বলেন, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ একটি জিং সমৃদ্ধ ধান। ধান চিকন। খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়া যায়। এছাড়া ধানের ফলনও বেশ ভাল। এই ধান আবাদ করে আমাদের লাভ হয়। আমার জমির ধান দেখে আগামী বছর প্রতিবেশী অনেক কৃষক এই ধান আবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন  (৫৫) বলেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান বীজ ও সার বিনামূল্যে পাই। এরপর এই ধানের আবাদ করি। এই ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছি। এই জাতের ধানে রোগবালাই নেই। তাই ফলন ভাল হয়েছে। ভবিষ্যতে আমি এই ধানের আবাদ করব।

ওই কৃষক আরও বলেন, আমার পাশের জমির কৃষক বিআর-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন। ওই ক্ষেতের ধানে নেক ব্লাস্টের আক্রমন হয়েছে। তিনি ভাল ফলন পাননি। তাই ২৮ জাতের বিকল্প হিসেবে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ আবাদ করা যায়। তিনি এই ধান আবাদ করলে লাভবান হতেন। তবে আগামী বছর তিনি বঙ্গবন্ধু-১০০ ধান আবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ জাতের চাবাদ সম্প্রসারণে আমরা বিনামূল্যে ৫ টন বীজ বিতরণ করেছি। সেই সাথে আমরা বিনামূল্যে কৃষককে প্রয়োজনীয় সার দিয়েছি। ৫ টন বীজের মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় ৪ টন বীজ বিতরণ করেছি। ১ টন বীজ বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় বিতরণ করেছি। কৃষককে এই ধান আবাদে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সরেজমিনে কৃষকের মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়েছি। তাই এই ধান আবাদ করে কৃষক বাম্পার ফলন পেয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এই জাতটি জিং সমৃদ্ধ। জিং মেধা বিকাশে সহায়তা করে। তাই আমরা এই জাতের চাষাবাদ সম্প্রসারণে কাজ করছি। বিআর-২৮ প্রায় ৩০ আগে উদ্ভাবিত একটি জাত। তাই এই জাতে রোগ বালই বেশি। এই কারণে আমরা বিআর-২৮ জাতের ধান চাষে কৃষককে নিরুৎসাহিত করছি। বিআর-২৮ এর বিকল্প হিসেবে কৃষকে বঙ্গবন্ধু ১০০  ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করছি। বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ এর চাষ সম্প্রসারিত হলে দেশে ধানের ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে জানান ওই গবেষক। 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর