ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সূর্যমুখী চাষে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে পাহাড়ে
ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

সূর্যমুখী। একটি ফুলের নাম। তবে এ ফুল থেকে উৎপাদন হচ্ছে তেল ও খৈল। আবার ফুলও বিক্রি হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এরই মধ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে পাহাড়ে। সূর্যমুখীর তেল আর খৈলের চাহিদা এখন সবখানে। আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় এখন সূর্যমুখী চাষাবাদ করছে চাষীরা। তাই তো সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে সবুজ পাহাড়। ভোর হলেই সোনা রোদে চোখ মেলে ঝলমলে সূর্যমুখী। সূর্য মামার সঙ্গে রাঙামাটির সূর্যমুখীর বাগানও জেগে উঠে। পাহাড়ের ভাজে ভাজে মাইলের পর দিগন্ত বিস্তৃৃত ক্ষেতে সূর্যমুখীর চাষ। যতদূর চোখ যায় সোনা রোদের সঙ্গে সূর্যমুখীর হলুদ আভা। সবুজ পাতার আড়ালে মুখউঁচু করে আছে সূর্যমুখী। দেখতে কিছুটা সূর্য্যের মত। সূর্য্যে দিকে মুখ করে থাকে বলে তাই এ ফুলের নাম সূর্যমুখী। এ ফুল আকর্ষণ কেড়েছে স্থানীয়দের। বাজারজাত হচ্ছে সূর্যমুখী তেল ও খৈল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড়ে কৃষি জমিতে তামাকের অগ্রাসন কমাতে সূর্যমুখী চাষে উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদের। 

রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছে, রাঙামাটির ১০টি উপজেলায় সূর্যমুখী চাষাবাদ হচ্ছে। জেলার প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে আবাদ হয়েছে এ সূর্যমুখী। প্রতি হেক্টরে জমিতে ৪১ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত উফশি হাইসান-৩৩, বারি-২ ও ৩ । হাইসন-৩৬ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখীর তৈল ছাড়াও খৈল দিয়ে মাছের খাবার এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এবার সবচেয়ে বেশি নানিয়ারচর উপজেলা ও বরকলের হরিণা ও ভূষণছড়া, এ্যারাবোনিয়ায়। কৃষি বিভাগের সহায়তায় উপযুক্ত চাষাবাদের কারণে প্রথম চাষে বাম্পার ফলন ফেয়েছে কৃষকরা। ফুলে ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। তাই দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। কম খরজে বেশি লাভের সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছে অনেক চাষি। তাই পাহাড় এখন সূর্যমুখীর দখলে। 

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক আপ্রু মারমা জানান, সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এ বীজ হাঁস মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়। এক হাজার বীজের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের রঙ কালো এবং লম্বা ও চেপ্টা। প্রতি গাছে একটি করে মাঝারি আকারের ফুল ধরে থাকে। বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.৩-১.৫ টন ফসল পাওয়া যায়।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ভূয়োদামের বাসিন্দা ত্রিজীবন চাকমা বলেন, আমি প্রায় ২ একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। প্রথম চাষাবাদে ফল হয়েছে বাম্পার। ফুল বীজ, তেল আর খৈল সব বিক্রি করা যায়। তাই লাভও বেশি। এক কথায় কম খরচে বেশি লাভ হচ্ছে এ চাষে।  সূর্যমুখী চাষী স্নেহাংশু চাকমা  বলেন, আমার এক একর চাষের জমি রয়েছে। অতীতে আমি এই জমিতে তামাক চাষ করেছিলাম। কিন্তু পরিবেশের দূর্ষণের কারণে তামক চাষ ছেড়ে সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছি। বর্তমানে ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। ফলন হয়েছে ব্যাপক। 

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সম্প্রতি রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ৫ হেক্টর, বরকল উপজেলায় ২৫ হেক্টর, জুরাছড়ি উপজেলায় ৫ হেক্টর, লংগদু উপজেলার ২০ হেক্টর এবং বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের আওতায় আনা হয়েছে। বছরের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ চাষাবাদ। এভাবে যদি চাষীদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তণ আনা যায় পাহাড়কে তামাকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করা যাবে। ক্ষতিতে পড়বে না কৃষকরাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিডি প্রতিদিন/এএ



এই পাতার আরো খবর