ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শেরপুর সীমান্তে মানুষ-হাতির ‘দ্বন্দ্ব’ থামছে না, এক সপ্তাহে ৩ কৃষকের মৃত্যু
শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চল মেঘালয় ঘেষা শ্রীবরদি, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ী বনে মানুষ হাতির ‘দ্বন্দ্ব’ যেন থামছেই না। এই দ্বন্দ্বে গত এক সপ্তাহে তিনজন কৃষক হাতির পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছেন।

আজ শনিবার  একটি হাতিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের শেষ দিকে তিনটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত এক যুগে অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ হাতির পায়ে পৃষ্ঠ হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ কৃষক। আহত হয়েছেন অনেকেই।

এই দ্বন্দ্বে একই সময়ে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক হাতির। ক্ষতি হয়েছে ফসল আর বাড়িঘরের। ঝামেলা এড়াতে সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে পাহাড়ে বৈদ্যুতিক বেড়া (সেলার ফেনসিং) নামক প্রকল্প চালু করে কয়েক বছর আগে। তারও আগে কাঁটাযুক্ত গাছ ও নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এই দ্বন্দ্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও বেড়েছে। এখন ধান কাটার মৌসুমে ফসল বাঁচাতে লাঠিসোঠা ও আগুনের গোলা নিয়ে রাতদিন পাহাড়া বসিয়েছে কৃষকরা। এর মধ্যে যেকোন সময় হাতি দলবল নিয়ে ধান খেতে নেমে পড়ছে।বাঁধা দিলেই শুরু হচ্ছে লড়াই। পাহাড়ের মানুষজন বলছে হাতি আরও আগ্রাসি হয়ে উঠেছে। পাহাড়ের মানুষজন বলছে কয়েক বছর ধরে হাতি কিছুই আর মানছে না। বাধা দিলেই উল্টো আক্রমণ করছে। বন বিভাগ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই দ্বন্দ্ব নিরসন করতে বনে হাতির জন্য প্রাকৃতিক অভয়াশ্রমই সমাধান। 

সরকারের বন্যপ্রানী সংরক্ষণ বিভাগ বলছে বৃহদাকার এই প্রাণিটি নিদেন পক্ষে দৈনিক ১৫০ কেজি খাবার খায়। কিন্তু মানুষের কারণে ওরা খাদ্য সংকটে পড়েছে। কমেছে হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। খাদ্য সংকট ও স্বাভাবিক চলাফেরায় বিপত্তি ঘটায় মানুষের সাথে দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে হাতি। সরকারের এই বিভাগের দাবি পাহাড়ে বনাঞ্চল উজার, হাতির বসতি ধ্বংস, হাতির খাবার সংকট, স্বাভাবিক চলাচলে বাধা, মানুষের নিষ্ঠুরতা, হাতির বসতিতে মানব বসতি গড়ে উঠা, এই বনাঞ্চলের সড়ক নির্মাণ ইত্যাদি কারণে এই দ্বন্দ্ব বাড়ছে। শেরপুরের এককালের গভীর বনাঞ্চল এখন অনেকটা আবাসিক, আধুনিক প্রকল্প ও উর্বর চাষবাসের উত্তম ক্ষেত্র হয়ে গেছে।এসবে হাতির বসবাস ও খাবারের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।বৈদ্যুতিক আলো আর গাড়ীর শব্দ পাহাড়ের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

সূত্র জানায় হাতির পূর্ব পুরুষ যে স্থান দিয়ে চলাফেরা করেছে বংশ পরমপরায় সেই পথ দিয়েই পরবর্তী বংশধর  চলাফেরা করে। ওই পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু ইউসুফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানুষ ও হাতির এই দ্বন্দ্ব অবসানে বছর খানের আগে এই অঞ্চলে ২২ হাজার একরের অভয়াশ্রমের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মানুষ ও হাতিকে বাঁচাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে  হবে। 

এই বনকর্মকর্তার দাবি শেরপুরের যে পরিমাণ বনাঞ্চল তাতে এত সংখ্যাক হাতি ধারন করা সম্ভব না। এজন্য পার্শবর্তী ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মধ্যে কথা বলে দুই দেশের হাতির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। সর্বোপুরি প্রকৃতি নষ্ট না করে বনের মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর