ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পড়ন্ত বিকেলে নৈসর্গিগ দৃশ্য
পদ্মপুকুরের ‘শ্বেতপদ্মে’ মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি সৌন্দর্যপ্রেমীদের
রাহাত খান, বরিশাল
ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বরিশাল নগরীর বান্দ রোড লাগোয়া বিআইডব্লিউটিএ নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় ‘হীম নীড়’ চত্ত্বরের ঐতিহাসিক পদ্মপুকুর গত কয়েক বছর বিবর্ণ থাকলেও এবার কিছু ‘শ্বেতপদ্ম’ ফুঁটেছে। শেষ বিকেলে পদ্ম পুকুরে শ্বেতপদ্মের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। তবে বরিশালের ঐতিহ্য এই পদ্ম পুকুরটির যত্নে কর্তৃপক্ষকে আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। 

২০১৭ সালে এই পদ্মপুকুর পরিদর্শন শেষে এমন শ্বেতপদ্ম পুকুর দেশ বিদেশে বিরল বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে মন্তব্য করেছিলেন বিআইডব্লিউটি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও মরিশাসের তৎকালীন রাস্ট্রদূত আবদুল মান্নান হাওলাদার। গোলাপি রংয়ের পদ্ম ফুল অহরহ দেখা গেলেও একই জলাশয়ে এত সাদা পদ্ম ফুল পৃথিবীতে বিরল বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।  

আগাছা পরিষ্কারের নামে গত ৩ বছর আগে কর্তৃপক্ষ পদ্ম পুকুরের ভাসমান এই জলজ উদ্ভিদ (পদ্মগাছ) কেটে পরিস্কার করে। এ ঘটনায় নাগরিক সমাজ বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানায়। কেটে ফেলা গাছের কান্ড থেকে কিছু গাছ গজিয়ে পরের বছর অল্প কিছু শ্বেতপদ্ম ফোঁটে। পরের বছর আরও বেশি কিছু ফুল ফোঁটে। গত বছর পুকুরের উপর পশ্চিম-উত্তরপাশে আয়রন স্ট্রাকচারের ছাউনিযুক্ত একটি অবকাঠামো (চা চক্রের স্থান) নির্মাণ করা হয়। পুকুরটি আরও পর্যটনবান্ধব হয়। গাছ কেটে ফেলার তৃতীয় বছরে এবার বেশ কিছু শ্বেতপদ্ম ফুঁটেছে পুকুরে।  

প্রতিদিন শ্বেতপদ্ম দেখতে পদ্ম পুকুরের পাশে ভিড় করেন সৌন্দর্যপ্রেমীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দলে দলে পদ্ম পুকুর দেখতে আসেন তারা। চারিদিকে নিরাপত্তা দেয়ালে (গ্রীল যুক্ত) ঘেরা পুকুরের শ্বেতপদ্ম ফুলের সৌন্দর্য দূর থেকে অবলোকন করতে হয় তাদের। প্রবেশাধিকার সিমীত এবং গেটে নিরাপত্তারক্ষী থাকায় তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না। রক্ষীকে বুঝিয়ে কেউ পুকুর পাড়ে যেতে পারলেও দূর থেকে দেখে চলে যান বেশিরভাগ দর্শনার্থী। তারা সেখানে শ্বেতপদ্মের ছবি তোলেন, কেউ তোলেন সেলফি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি তাদের। 

পদ্ম পুকুর দেখতে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জেরিন আক্তার বলেন, পদ্ম ফুল দেখে মুগ্ধ হওয়ার মতো। পড়ন্ত বিকেলে পরিবেশটি আরও মনোমুগ্ধকর হয়। এতে মনে প্রশান্তি পাওয়া যায়।

এই পুকুরটি সংরক্ষনে কর্তৃপক্ষের আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে বেসরকারি চাকরিজীবি নুরুল হক বলেন, নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই ঐতিহাসিক পুকুরটি সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব। 

দৈনিক একটি নির্দিস্ট সময় অথব সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পদ্মপুকুর সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত শ্বেতপদ্ম পাওয়া যায়। এটা হার্ভ জাতীয় উদ্ভিদ বা প্লান্ট। ভাসমান জলজ উদ্ভিদও বলা হয়। পদ্মফুল সৌন্দর্য ছড়ায়। এই ফুলের ভেজষ গুণও আছে। পদ্ম গাছের কান্ড সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। 

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র সিনিয়র ড্রাফট্সম্যান একেএম মনিরুজ্জামান জানান, ব্রিটিশ আমলে বান্দ রোডের পাশে সাড়ে ৫ একর জায়গায় স্টিমার কোম্পানীর কার্যালয় করা হয়। ১৯৬৫ সালে মেরিন ওয়ার্কশপের তৎকালীন ম্যানেজার জার্মান নাগরিক ইলিগনর বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু শ্বেতপদ্ম গাছ সংগ্রহ করে পুকুরের তলদেশে রোপণ করেন। ধীরে ধীরে পুরো পুকুর সাদা পদ্মে ছেয়ে যায়। যার পরিচিতি এখন ‘পদ্ম পুকুর’ নামে। ১৯৪২ সালে জরিপ অধিদপ্তরের এসএ নকশায় বিআইডব্লিউটিএ’র ৮০ শতাংশ জুড়ে ‘পদ্মপুকুর’ উল্লেখ রয়েছে।

পদ্মপুকুরটির ভবিষ্যত উন্নয়নের বিষয়ে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন-উর রশীদ বলেন, ফুলগুলো যেভাবে আছে সেটাকে রক্ষাবেক্ষনের চেষ্টা করছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা পুকুরের বড় সৌন্দর্য। পুকুরটির সৌন্দর্য বাড়াতে এর চারপাশ যেভাবে করা উচিত সেভাবে করা হবে। দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যে আসে সেই একটা ফুল ছেড়ে। এটা একটা হেরিটেজ। একটা ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস। একটা ভিভিআইপি রেস্ট হাউজ আছে। এটা উন্মুক্ত করা উচিত হবে না বলে মন্তব্য তার। 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর