ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পাটের বাজারে দরপতন, হতাশ পাবনার চাষিরা
পাবনা প্রতিনিধি:

দেশের অন্যতম পাট উৎপাদনকারী জেলা পাবনায় এবার আগাম বৃষ্টি না হওয়ায় সোনালি আঁশ পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ভালো ফলনের পরও দাম কম থাকায় দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। জেলায় ইতোমধ্যে ক্ষেত থেকে পাট কাটার কাজ শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে অনেকে মুক্ত জলাশয়ে জাগ দিয়ে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ শেষ করে বিক্রি শুরু করেছেন। কিন্তু দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। সরকারি ও বেসরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা ও হতাশায় পড়েছেন তারা। 

চাষিরা দাবী করেন, যতো দ্রুত সম্ভব পাটের দাম আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সরকার নির্ধারিত মূল্য ঠিক করে দেয়ারও দাবি চাষিদের।

চাষিরা জানান, এবার পাটের ফলন ভালো হলেও পানির অভাবে পাট পঁচানো নিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। সম্প্রতি হালকা বৃষ্টি হওয়ায় কিছু কিছু এলাকার খাল-বিলে স্বল্প পানির দেখা মিললেও যে পরিমাণ পাটের আবাদ হয়েছে তা পঁচাতে পর্যাপ্ত নয়। নিজেদের আশেপাশে খাল বা জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দূরে বয়ে নিতে পরিবহন ও শ্রমিক বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় গুনতে হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। তার বিপরীতে পাটের বাজার দর তেমন সন্তোষজনক নয়।

চাষিরা আরো জানান, আটি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা করে পঁচানো খরচ, শ্রমিক ও বীজের মূল্য সংক্রান্ত ব্যয়সহ এবার বিঘা প্রতি প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পাটের বর্তমান বাজার মণ প্রতি ১৬ শত টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। এক বিঘায় সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ মণ পাটের আঁশ পাওয়া যায়। এগুলো বিক্রি করে নীট খরচই হয়তো উঠবে, লাভ তো দূরে থাক নিজেদের শ্রমের মূল্যও মিলবে না। এমন অবস্থায় চাষিদের দাবি পাটের বাজার মূল্য বৃদ্ধি ও বাজার মনিটরিংয়ের।

পাবনা সদরের ইসলামপুর গ্রামের চাষি আব্দুল আওয়াল বলেন, এই যে পঁচা পানিতে সারাদিন পাট জাগ দেয়া থেকে ধোঁয়ার কাজ করছি এই শ্রমই বৃথা। কেবল খরচই হয়তো এ থেকে উঠবে। যারা পাটের সকল কাজই লেবার নিয়ে করাচ্ছে তাদের বরং লোকসান হবে।

আটঘরিয়া উপজেলার পাটেশ্বর গ্রামের কৃষক নাজমুল ইসলাম জানান, তিনি এবার সাত বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। শুরুতে আশেপাশের খাল বা নালায় পানি না থাকায় সেচ পাম্পে পানি উঠিয়ে পাট জাগ দিয়েছেন। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় পানি সংকট কমলেও যা ব্যয় দাঁড়িয়েছে তা উঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। 

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার মোট ৪৩ হাজার ২শ ৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৫ হাজার হেক্টরের মত। এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও গত বছর ৪৫ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিলো। এর আগের বছর আরো বেশি ছিলো।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন বলেন, আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। শুরুর দিকে দাম একটু কম থাকে। পরে কিন্তু বাজার দর খানেকটা বেড়ে যায়। সবমিলিয়ে ভালো দাম পেলে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর