ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বিলুপ্ত প্রজাতির মিঠাপানির কুমির রক্ষায় সুন্দরবনে কাজ শুরু
শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

লবণ পানি প্রজাতির কুমিরের পর এবার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজাভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) বিলুপ্ত তালিকায় থাকা মিঠাপানি প্রজাতির (মার্শ ক্রোকোডাইল) কুমিরের প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারে সরকারিভাবে এগিয়ে এসেছে বন বিভাগ। এজন্য ফরিদপুর, পাবনা ও নড়াইলের নদী থেকে উদ্ধার হওয়া বিলুপ্ত প্রজাতির ৩টি মিঠাপানির কুমির বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে আনা হয়েছে। 

এই তিনটি কুমিরের মধ্যে একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী প্রজাতির। এরমধ্যে ১৪ বছর বয়ষের স্ত্রী প্রজাতির একটি কুমির প্রাপ্তবয়স্ক। অন্য দুটি অপ্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের মধ্যে পুরুষ প্রজাতির কুমিরটির বয়স ১২ বছর, অন্য স্ত্রী প্রজাতির কুমিরটি ১০ বছরের। মিঠাপানি প্রজাতির পুরুষ কুমির প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আগামী মৌসুমে প্রজননের মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব হবে না। প্রায় দুই যুগধরে লবণ পানি প্রজাতির কুমির প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০২৫ সালে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে মিঠাপানি প্রজাতির কুমিরের প্রজননের মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব হবে বলে আশা বন বিভাগের।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ হাওলাদার এম আজাদ কবির জানান, সরকারিভাবে দেশের প্রথম বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি ২০০০ সালে সুন্দরবনের করমজল গড়ে ওঠার পর থেকে প্রজননের মাধ্যমে লবণ পানি প্রজাতির কুমির, হরিণ ও বিলুপ্ত প্রজাতির বটারগুর বাসকা কচ্ছপের বাচ্চা জন্ম দিয়ে লালন পালন করে নদী ও বনে অবমুক্ত করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজাভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০০০ সালে বাংলাদেশে মিঠাপানি প্রজাতির (মার্শ ক্রোকোডাইল) কুমির নেই বলে বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর থেকে দেশের কোন নদনদীতে আর মিঠাপানি প্রজাতির কুমিরের দেখা মিলছিল না। চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদে পদ্মার শাখা নদী ভূবেনশ্বরে  প্রথমে ৯০ কেজি ওজনের ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা একটি মিঠাপানির (মার্শ ক্রোকোডাইল) পুরুষ প্রজাতির কুমির ধরা পড়ে। এর চার দিন পর ২১ অক্টোবর পাবনার সুজানগর উপজেলার উদয়পুরে পদ্মা নদী থেকে ৮০ কেজি ওজনের ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি লম্বা মিঠাপানির মহিলা প্রজাতির কুমিরটি ধরা পড়ে। মিঠাপানির মহিলা প্রজাতির ৮০ কেজি ওজনের ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি লম্বা সর্বশেষ কুমিরটি ধরা পড়ে ২৮ অক্টোবর নড়াইলের লোগাগড়া উপজেলার মধুমতির নদীর কাছে মাইগ্রাম বিল থেকে। বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে গত ৯ নভেম্বর এই তিনটি মিঠাপানি প্রজাতির কুমির সংরক্ষণ এবং প্রজননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধির জন্য পাঠানো হয় সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে। করমজলে লবণ পানি প্রজাতির কুমিরসহ বিলুপ্ত প্রজাতির বটারগুর বাসকা কচ্ছপের প্রজনন ও বসবাসের জন্য তিনটি পুকরেই লবনাক্ত পানি থাকায় কুমির তিনটি আলাদা তিনটি প্যানে (কুমিরের সেড) রাখা হয়েছে। মুক্তজলাশয়ে থেকে মাছ খেতে অভ্যস্ত এই কুমির তিনটি এখন পর্যন্ত মাংস দিলেও তা খায়নি। শুধুই মাছ খাচ্ছে। করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্রের সেডের মিঠা পানিতে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিচ্ছে কুমির তিনটি। কুমির তিনটির জন্য নতুন একটি পুকর খনন বা পুরনো একটি পুকুরের পাড় উঁচু করে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা করার পরই প্যান থেকে মিঠাপানি প্রজাতির এই কুমির তিনটিকে পুকুরে ছাড়া হবে। একটি স্ত্রী প্রজাতির কুমির প্রাপ্তবয়স্ক হলেও একমাত্র পুরুষ প্রজাতির কুমিরটি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত প্রজননের মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব হবে না। আগামী ২০২৫ সালে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে মিঠাপানি প্রজাতির কুমিরের প্রজননের মাধ্যমে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো সম্ভব হবে বলে জানান এই কুমির বিশেষজ্ঞ। 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর