ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গলাচিপায় পানিবন্দী ১০০ পরিবার, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি
গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

‘বইন্যার রাইত হইতে খাইতে পারি নাই। আমাগো বাড়ি জোয়ারের পানিতে ডুইব্যা যায়। পোলা মাইয়া লইয়া না খাইয়া আছিলাম। এহন এই খাওন (খাবার) নিয়া পোলা মাইয়া লইয়া খামু।’ কথাগুলো বলছিলেন গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরকারফারমার ফাহিমা বেগম। শনিবার সকালে গলাচিপা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দুর্গম চরকারফারমা এলাকার পানিবন্দী একশ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে।

এসব পরিবার চরম অসহায় জীবনযাপন করছিল। এসময় ত্রাণ নিতে আসা ঝুমুর বেগম বলেন, ‘বইন্যার জোয়ারের পানিতে আমাগো সব ডুইব্বা যায়। আমরা মাইনষের খ্যাতে  (ক্ষেতে) রোউজ্জা  (রোজ হিসাবে) কাম করি। পানিতে খ্যাত নষ্ট হওয়ায় আজ আর আমাগো কোন কামও নাই, টাহাও নাই। পোলা মাইয়ারে কি খাওয়ামু হেই চিন্তায় মাতা (মাথায়) ঘুরে। আবার এর মধ্যে সোনালি ধানের রঙ আইতেই কৃষকের মুখের হাসি কাইড়া নিছে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও অতিবৃষ্টিতে আমন ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি অইছে। ক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় পানি জইমা আছে। আবার কোথাও বাতাসে ধান মাটিতে শুইয়া পড়েছে। এইসব ধান ক্ষেতে পানি জইমা থাকায় ধান মাটিতে শুইয়া পড়ায় ক্ষতি হচ্ছে বেশি।’ 

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. মিজান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টি আর বাতাসে ধান মাটিতে শুইয় পড়ে। আমি আড়াই একর জমিতে ধান চাষ করি। এর মধ্যে অর্ধেকের মতো জমির ধান পানির মধ্যে মাটিতে শুইয়া পড়েছে। ক্ষেতে পানি জইমা আছে। বদলা মানুষও পাই না। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই ক্ষেতের পানি সেজ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এতে যতটুকু পানি শুকানো যায়। আর কোন সমস্যা না হলে আমি ৫০ থেকে ৬০ মণ ধান পাইতে পারি।’ 

একই গ্রামের আরেক কৃষক জামাল হাওলাদার বলেন, ‘আমি ১২ একর জমিতে আমন ধান চাষ করছি। বইন্যায় প্রায় ৩০০ শতাংশ জমির ধান নষ্ট হইয়া গেছে।’

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ভাড়ি বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত পানি ও বাতাসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে এবার আমন ধানের ১০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে স্বীকার করেন উপজেলা কৃষি দপ্তর।

অপরদিকে গলাচিপা উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী এসএম আসাদুজ্জামান আরিফ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ৪০টি কাঁচা ঘর আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট নষ্ট হওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া চর কারফারমার ১০০ পরিবার পানিবন্দী ছিল। আজ (শনিবার) সকালে আমরা তাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। এর বাইরেও যদি দুর্গত কেউ থাকে তাহলে আমরা তাদের সহায়তা দেব।’ 

গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, ‘এবার আমন মৌসুমে গলাচিপায় ৩৬ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে ১০ ভাগ ধান বাতাস ও অতিবর্ষণের পানিতে ক্ষেতে শুয়ে পড়ে। শুয়ে পড়া ১০ ভাগের মধ্যে ৮ ভাগ ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হবে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও তরমুজ, ডাল, মরিচসহ আগাম জাতের রবি শষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতির সঠিক নিরূপণ করতে আরো দু’একদিন সময় লাগবে। আমরা এখনো মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি।’

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল



এই পাতার আরো খবর