ঢাকা, বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়া!
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলায় কৃষকরা খেতের ফসল পশু-পাখি, ইঁদুর ও মানুষের কু-নজর হতে রক্ষার কৌশল হিসেবে অদ্ভুত ও অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যার নাম কাকতাড়ুয়া। আদিকাল হতে এ রকম এক প্রহরীকে ফসলের খেতে দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামীণ জনপদে আধুনিক যুগেও এমন অদ্ভুত বিশ্বাসের লোকের অভাব নেই! তেমনই বিশ্বাস নিয়ে কৃষকরা খেতের ফসল রক্ষার্থে কাকতাড়ুয়া (মানুষের প্রতীক) ব্যবহার করছেন। লম্বা দন্ডায়মান একটি খুঁটি এবং দুই বা তিন ফুট ওপরে আড়াআড়ি আরেকটি খুঁটি বেঁধে তাতে ছন বা খড় প্যাঁচিয়ে মোটাসোটা করা হয়। তারপর আড়াআড়ি বাঁধানো অংশের সামান্য ওপরে ছন বা খড়কুটো দিয়ে ডিম্বাকৃতি বা মাথার মতো বস্তু বানানো হয়। এরপর ছেঁড়া জামা বা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া হয় এটিকে। ডিম্বাকৃতির অংশটিকে ঢেকে দেওয়া হয় মাটির হাঁড়ি দিয়ে। সেই হাঁড়িতে চোখ-নাক-মুখ এঁকে দেওয়া হয় চুন বা চক দিয়ে। যা দেখে ভয় পাওয়ার মতো একটা ব্যাপার ঘটে। এই কাকতাড়ুয়াকে ফসলি জমির মাঝখানে দন্ডায়মান রাখা হয়। অনেকের বিশ্বাস বাড়ন্ত ফসলের দিকে পথচারীর কুদৃষ্টি থেকে কাকতাড়ুয়া রক্ষা করে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরন বদলে গেলেও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে খেতের ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছেন। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়ুয়া দেখে খেতে পশু-পাখির উপদ্রব ঘটে না। ফলে ফসলও নষ্ট হয় না। এ মৌসুমে জমিতে বেগুন, খিরা, মরিচ, আলু, পিঁয়াজ, শসা, টমেটো, ধান আবাদ করা হয় তখনই এই কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করা হয়। কৃষক মো. রুহুল আমিন জানান, কাকতাড়ুয়া পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্যে জমিতে দাঁড় করা মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ।

ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশে জমিতে এটা রাখা হয়। এটি এক প্রকার ফাঁদ, যা ভয় দেখানোর উদ্দেশে তৈরি করা হয়। সনাতন ধারায় এটি মানুষের দেহের গঠনের সঙ্গে মিল রেখে পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে সঙের ন্যায় সাজানো হয়। তারপর জমির মাঝামাঝি স্থানে খুঁটি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এটি বাতাসে দুলতে থাকায় পাখির উৎপাত ও তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখার প্রয়াস চালানো হয়।

ফুলগাছ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম খন্দকার বলেন, প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা খেতে কাকতাড়ুয়া স্থাপন করে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না এমন বিশ্বাস থেকে।



এই পাতার আরো খবর