ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যমুনার চরে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

পলি বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনার চরে পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় চর এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বাজারে মিষ্টি কুমড়ার ভালো দাম থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। পতিত জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে তাদের।

কৃষকরা বলছেন, ভালো মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে চর এলাকায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া এসব মিষ্টি কুমড়া বগুড়ার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ।

জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা যমুনা নদী দ্বারা বিধৌত। উপজেলাগুলোর চরাঞ্চলে হাজার হাজার হেক্টর জমি প্রতিবছর পতিত হয়ে থাকে। কৃষকরা পতিত জমিগুলো ফেলে না রেখে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় আশপাশের কৃষকরাও এই আবাদে ঝুঁকছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর মিষ্টি কুমড়ার চাষ দ্বিগুণ হয়েছে। দেশি মিষ্টি কুমড়ার চেয়ে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া সংখ্যায় বেশি ধরে। হাইব্রিড মিষ্টি কুমড়া প্রতিটি গাছে ২০ থেকে ২৫টি করে ধরে। আর ওজন ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সাধারণত সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া জমিতে রোপণ করা হয়। রোপণ করার ৪০ থেকে ৫০ দিন পর গাছে ফুল আসে। ফুল আসার কয়দিন পরই ফুলগুলো ফলে পরিণত হয়। ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় এবং বিক্রয়ও করা হয়। তবে পাকা ফলগুলো সংগ্রহের উপযোগী হয় রোপণের ৮০ থেকে ৮৫ দিন পরে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। এ বছর মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হওয়ায় ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন কৃষক এবং মৌসুম পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর এলাকার হাসান আলী জানান, দিঘাপাড়া চরের ১৮ বিঘা পতিত জমিতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছিলেন। ২ লাখ টাকা খরচ করে তিনি সাড়ে ১০ লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। 

এই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুর রশিদ মন্ডল জানান, চরাঞ্চলের এসব জমিগুলো আগে পতিত পরে থাকত। কিন্তু এখন এই পতিত জমিগুলোতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আমরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছি। তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৫০ মণ মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। এখনো তার জমিতে ৬০০ মণ মিষ্টি কুমড়া রয়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ী আফজাল হোসেন জানান, যমুনার চর এলাকায় প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া বিঘা চুক্তিতে ক্রয় করে থাকেন। প্রতি বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রয় করেন। এগুলো পরে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। বর্তমানে তিনি ২৯ টাকা কেজি দরে মিষ্টি কুমরা বিক্রি করছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, গত বছর হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে। হেক্টর প্রতি মিষ্টি কুমড়ার ফলন ২০ টন। ধানের চেয়ে মিষ্টি কুমড়া আবাদে বেশি লাভ হয়।

তিনি আরও জানান, এক বিঘা জমির ধান থেকে কৃষকের যা আয় হয়, মিষ্টি কুমড়া থেকে তার কয়েকগুণ বেশি আয় হয়। কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা চরাঞ্চলের পতিত জমিগুলোতে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

বিডি প্রতিদিন/এমআই    



এই পাতার আরো খবর