ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বগুড়ায় শীতে কাঁপছে জনজীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

প্রবাদ আছে মাঘের শীতে, বাঘ কাঁদে। মাঘ মাসে বগুড়া জেলায় শীত আর ঘন কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায় কাঁপছে জনজীবন। বিশেষ করে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষরা। গত কয়েকদিন ধরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। একই সাথে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। মৌসুমের শুরুতে তেমন শীত অনুভূত না হলেও গত কয়েকদিনের মৃদু শৈত্যপ্রবাহে শীত বাড়ছে।

ফলে সমস্যায় পড়েছেন ছিন্নমূল লোকজন। তীব্র শীতে স্টেশন, ফুটপাত ও বিভিন্ন খোলা স্থানে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। শীতের কারণে শহরের সাতমাথায় ফুটপাত ও হকার্সসহ বিভিন্ন মার্কেটে শীতবস্ত্র বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এদিকে বেলা পড়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা পড়তে শুরু করে এবং তাপমাত্রা কমতে থাকে। রাতে ও সকালে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।

শীত বেশি হওয়ায় আলুর ক্ষেতে পচা রোগ ধরায় চাষিরা শঙ্কায় রয়েছেন। হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগী বাড়ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত শনিবার বগুড়ায় ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে শীতের দেখা না পেলেও মধ্য পৌষের পর প্রচণ্ড শীত পড়তে শুরু করে। আর মাঘের শুরু থেকে তা হারে হারে বুঝিয়েছে শীতার্তদের। আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল বছরের শুরু থেকে শীতের কাঁপুনি থাকবে প্রকৃতিতে। মাঘ মাসের শুরু থেকেই উত্তরের দিক থেকে আসা হিম শীতল বাতাস ও শীতে কাঁপছে মানুষ প্রকৃতি ও প্রাণিকূল। কুয়াশার চাদরে ঢেকে রাখছে প্রকৃতি। কনকনে শীতে ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র থেকে শুরু করে মেঝে, দরজা সব যেন ঠাণ্ডা হয়ে থাকে। বাতাসের জন্য রাত-দিন ঘরের দরজা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। শীতের কারণে শ্রমিক, কৃষক, রিকশা-ভ্যান চালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে সকল খেটে মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। শীতবস্ত্রের জন্য ফুটপাতের দোকান ও হকার্স মার্কেটে ভিড় করে সাধ্যমতো গরমের কাপড় কিনছেন শীতার্তরা।

বগুড়া আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মাঘ মাসের শেষ পর্যন্ত তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের দাপট থাকবেই। এরপর একটু একটু করে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে শীত কমবে। গতকাল শনিবার বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরাঞ্চলে এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

বগুড়া জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার দুর্গম যমুনার চরাঞ্চলে। যমুনা নদী সংলগ্ন হওয়ায় এসব এলাকায় শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। বিভিন্ন সময়ে যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার বেশকিছু এলাকাবাসী তাদের ভিটেমাটি এবং কৃষিজমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। কিনতে পারছেন না ভালো কোনো শীতের গরম কাপড়। প্রচণ্ড শীতে এসব মানুষরা আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়ন নদীগর্ভে। তাই এ উপজেলার বিশাল আয়তনের জনগোষ্ঠী চরবাসী। চরবাসীর লোকজন বারবার যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তাদের ভিটেমাটি এবং কৃষিজমি হারিয়ে অনেকেই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। যাদের বেশিরভাগই কৃষি কাজের সাথে জড়িত। যাদের কৃষিজমি নেই তারা অন্যের কৃষিজমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষরা শীত নিবারণের জন্য কোনো গরম কাপড় কিনতে পারেননি। কয়েকদিনের তীব্র শীতে এসব মানুষরা এখন শীতে কাঁপছে।

চর এলাকার সজিরন বেওয়া (৭০) জানান,  ৯ বার যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তিনি। ভিটেমাটি এবং কৃষিজমি হারিয়ে এখন বাস করছেন অন্যের জমিতে। অভাবের কারণে তিনি তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পান না। এর মধ্যে গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড শীতে তিনি কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

এদিকে, গত কয়েকদিন ধরেই এ উপজেলায় গভীর রাত থেকে শুরু করে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে। কুয়াশার জন্য রাতে দূরের কোনোকিছু চোখে দেখা যায় না। ঘন কুয়াশার কারণে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। গৃহপালিত পশুগুলো এই শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে। কৃষকরা হালকা শীতের কাপড় পরেই ছুটছেন ক্ষেতের দিকে। দিনমজুর এবং শ্রমিকরা বেড়িয়ে পড়েছে তাদের নিজ নিজ কাজে। অটোভ্যান শ্রমিকরা শীতের বাতাসকে উপেক্ষা করেই ছুটছেন পেটের দায়ে। বয়স্ক মানুষরা প্রচণ্ড শীতে ঘরবন্দী হয়েছেন। অপরদিকে পৌষের দাওয়াতে কুটুম বাড়িগুলো পিঠাপুলি দিয়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে, সেখানে চলছে শীতের গীত আর গান।

সোনাতলা উপজেলার গাড়ি চালক আলমাস হোসেন জানান, শীতের তীব্রতা খুব বেড়েছে। কুয়াশা থাকায় রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে সকালেও গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ফগ ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছি। কুয়াশার কারণে ধীরে চলাচল করতে গিয়ে সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

বগুড়া শহরের স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া ভিক্ষুক দুলাল মিয়া জানান, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার শীত বেশি। তিনি দিনভর ভিক্ষা করে রাতে স্টেশনের ফুটপাতে ঘুমান। জেলা প্রশাসন থেকে কম্বল পেয়েছেন। গায়ে কাঁথা-কম্বল জড়িয়ে থাকার পরও শীত যাচ্ছে না। প্রায় রাতেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় শীতে যেন গরিব অসহায় মানুষ কষ্ট না পায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চরবাসীদেরও এ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম্বল অপ্রতুল হওয়ায় কিছু লোক বাদ পড়তে পারেন। যারা বাদ পড়ছেন তাদের জন্যও দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসন শীতার্ত মানুষে পাশে সব সময় থাকবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর